নদিয়া: নদিয়ার রাজারামপুরে ঘোড়াইক্ষেত্র গ্রাম পঞ্চায়েত। এই এলাকায় এতদিন মানিক ভট্টাচার্য ও তাঁর পরিবারের একচ্ছত্র দাপট ছিল। কিন্তু এখন মানিকবাবু সপরিবারে জেলে। নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় স্ত্রী-পুত্র সহ হাজতে দিন কাটছে তাঁদের। আর এদিকে সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ভোটের মুখে কেমন হালচাল ঘোড়াইক্ষেত্রে? মানিকের গ্রেফতারি কতটা ফ্যাক্টর হল এলাকায়? নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মানিকের গ্রেফতারির পর কোন দিকে পাল্লা ভারী গ্রামে? খোঁজখবর নিতে টিভি নাইন বাংলার প্রতিনিধি যোগাযোগ করেছিলেন ঘোড়াইক্ষেত্রের মানুষজনের সঙ্গে।
মানিক ভট্টাচার্যর গ্রেফতারি পর এলাকার রাজনীতির সমীকরণ কিন্তু বদলে গিয়েছে। আগে ঘোড়াইক্ষেত্র গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন মানিকের বৌমা। মহুয়া ভট্টাচার্য। তাঁকে এবার দল টিকিট দেয়নি। এমনকী ভট্টাচার্য পরিবারের কারও ভাগ্যেই জোটেনি তৃণমূলের টিকিট। ওই এলাকায় এবার তৃণমূল প্রার্থী করেছে দিলীপ দাসকে। আর সেই তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েছেন শ্রীমন্ত ভট্টাচার্য। তিনি মানিকের ভাই। খুড়তুতো ভাই। আর গ্রামের সমীকরণের খোঁজখবর নিতে গিয়ে যা বোঝা গেল, মানিকের পরিবার কিন্তু বেশ ভাল বেগ দিতে পারে শাসক শিবিরকে। গ্রামের তরুণ প্রজন্ম অন্তত এমনই মনে করছে।
টিভি নাইন বাংলার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়েছিল গ্রামের এক তরুণের সঙ্গে। অল্পবয়সি এক তরুণ। বেসরকারি এক সংস্থায় কাজ করেন। নিয়োগ দুর্নীতিতে মানিক গ্রেফতার হলেও, সেই গ্রেফতারির বিশেষ প্রভাব গ্রামের ভোটে পড়বে না বলেই মনে করছেন ওই তরুণ। তাঁর বক্তব্য, এখানে যিনি ভাল কাজ করবেন, তাঁকেই মানুষ ভোট দেবেন। কিন্তু মানিকের গ্রেফতারির সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের বিশেষ প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করছেন তিনি। তাঁর মতে, এলাকায় পঞ্চায়েত ভোট ‘গোষ্ঠীগত ভোট’।
ভোটের আগে স্পষ্টভাবে মুখ খুলতে চাইছেন না গ্রামের কেউই। তবে গ্রামের মন বুঝতে তরুণ প্রজন্মের আরও এক প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেছিল টিভি নাইন বাংলা। ওই যুবকের এবারই পঞ্চায়েতে প্রথম ভোট। স্নাতক। বিএডও শেষ করেছেন। কিন্তু এখনও চাকরি মেলেনি। চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই যুবকও বলছেন, তৃণমূল এখন গ্রামে বেশ ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। মানিকের গ্রেফতারির পর ওই বুথে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে একই সঙ্গে এও জানাচ্ছেন, তৃণমূলের জন্য জেতার পথ একেবারে মসৃণ হবে না। বেশ বেগ পেতে হবে শাসক শিবিরকে। বরং নির্দল হয়ে দাঁড়ানো মানিকের ভাইয়ের দিকেই যে পাল্লা ভারী, সেই কথাও বোঝাতে খামতি রাখেননি তিনি।
মানিকের বিরুদ্ধে তো ভূরি ভূরি অভিযোগ। জেলে রয়েছেন সপরিবারে। জামিনের আবেদন করেও মেলেনি। কিন্তু তাও কেন মানিকের পরিবারের এতটা পাল্লা ভারী গ্রামে? কী এমন সমীকরণ রয়েছে সেখানে? পঞ্চায়েতের মুখে ওই তরুণ ভোটার বলছেন, মানিকের বৌমার সময়ে এলাকায় যথেষ্ট কাজ হয়েছে। স্কুল, রাস্তাঘাটের কাজ হয়েছে। গ্রামের মানুষজনের কাছে ব্যক্তিগত স্তরে ভালই নাম করে নিয়েছে ভট্টাচার্য পরিবার। আর এই অঙ্কেই এবার নির্দল শ্রীমন্ত বাজিমাত করতে পারেন বলে মনে করছেন গ্রামবাসীদের একাংশ।
গ্রামের বাস্তব চিত্র বলছে, তৃণমূলের একটি অংশ কিন্তু দলের হয়ে ভোটের প্রচারে বেরোচ্ছে না। মিটিংয়ে, মিছিলে তাঁদের দেখা মিলছে না। সে কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন এলাকার তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ দাসও। আর নির্দল হয়ে দাঁড়ানো মানিকের ভাই বলছেন, যাঁরা তৃণমূলের হয়ে ভোটের প্রচারে বেরচ্ছেন না, তাঁরা রয়েছেন নির্দলের সমর্থনে। মানিক-সমস্যা যে রয়ে গিয়েছে প্রচার পর্বে, তা মানছেন তৃণমূল প্রার্থীও। সাধারণ ভোটারদের গিয়ে বোঝাতে হচ্ছে, দলের সঙ্গে এই দুর্নীতির কোনও যোগ নেই। মানিক-কাণ্ড না ঘটলে যে তৃণমূলের পথ পঞ্চায়েতে আরও সহজ হত এলাকায়, তাও মানতে দ্বিধা করছেন না তিনি। যদিও জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল ও নির্দল দুই পক্ষই। উভয় পক্ষই নিজেদের মতো করে প্রচার করছেন। এলাকায় এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এখন দেখার শেষ পর্যন্ত চওড়া হাসি ফোটে কার মুখে।