নদিয়া: নদিয়ার শিবনিবাস গ্রাম। নাম শুনলেই মনে হয় এখানে শিবের নিবাস। এমনটা কেউ যদি ভেবেও নেয় তাতে বিন্দুমাত্র ভুল নেই। কারণ এ গ্রামে হাওয়ায় হাওয়ায় ঘোরে শিবের নানা গল্পকথা। তবে একইসঙ্গে এই গ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাসও। শিবনিবাস সেই গ্রাম, যা ভারতের মধ্যে হলেও, স্বাধীনতা দিবস পালন করে ১৮ অগস্ট।
চূর্ণী নদীর ধারে এই শিবনিবাস গ্রাম। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে খুব একটা দূরে নয়। এই গ্রামের বুকে এমন এক দাগ কেটেছিলেন স্যর র্যাডক্লিফ, যার ফলশ্রুতিই ১৮ অগস্ট স্বাধীনতা দিবস উদযাপন। ১৯৪৭ সালের ৩০ জুন। সে সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন স্যর র্যাডক্লিফ। তাঁকে মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছিল ‘বাউন্ডারি কমিশন’। লক্ষ্য ছিল ‘নতুন মানচিত্র’ তৈরি।
র্যাডক্লিফ সাহেবের দাগ টেনে দেশ ভাগাভাগির সময়ই ঘটে ভুলটা। র্যাডক্লিফ লাইন বা বর্ডার হিসাবে সে সময় যা নির্ধারিত হয়েছিল, তাতে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার একটা অংশ গিয়ে পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। এদিকে যশোর আর খুলনা রয়ে যায় ভারতে।
এই নয়া মানচিত্র ঘিরে তোলপাড় হয় নদিয়ার সেই সব অংশে। তারা ভারতে থেকে যেতে চায় এবং সেই দাবিকে জোরাল করেই পথে নামে। একেই দেশ ভাগের পর একটা টালমাটাল পরিস্থিতি, তার মধ্যে আবার এক জেলার কিছু অংশ অন্য দেশে চলে যাওয়ায় সেখানকার সাধারণ মানুষ গর্জে ওঠেন। ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেনের কাছে খবর পৌঁছয়। তিনি নির্দেশ দেন, যত দ্রুত এই ‘ভুল’ শোধরাতে হবে।
১৯৪৭ সালের ১৭ অগস্ট। অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে ঘোষণা করা হয়, শিবনিবাস-সহ একাধিক জায়গাই ভারতের। এরপরই ১৮ অগস্ট নদিয়া জেলার সদর কৃষ্ণনগরে পাকিস্তানি পতাকা সরিয়ে উত্তোলন করা হয় তেরঙা পতাকা।
এরপর থেকে শিবনিবাস গ্রামের বেশ কিছু মানুষ ১৮ অগস্ট জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। শিবনিবাসের বাসিন্দা অঞ্জন সুকুল জানান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছ থেকে অনুমতি পত্র নিয়েই ১৮ অগস্ট জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তাঁরা। এখন ১৮ অগস্ট কমিটিও আছে শিবনিবাসে।
১৯৯৮ সাল থেকে রেজিস্টার্ড সংগঠন এই ১৮ অগস্ট কমিটি। ১৮ তারিখ হইহই করে উদযাপন করা হয় দিনটি। যেহেতু বর্ডারের কাছের শহর, বিএসএফের জওয়ানরাও আসেন। নাচগান, চূর্ণীতে হয় বাইচ প্রতিযোগিতাও।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)