উত্তর ২৪ পরগনা: পিকনিকে গিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে। তখনও পর্যন্ত তাঁর আচরণে কোনও অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ্য করেননি বাড়ির সদস্যরা। যখন ফিরেছিলেন, তখনও তাঁর কথাবার্তা স্বাভাবিকই ছিল। এমনটাই দাবি পরিবারের। কিন্তু তৃণমূল ছাত্র নেতা নিজের মনের অবস্থা জানান দিয়েছিলেন, ফেসবুকের দেওয়ালে। লিখেছিলেন, “দূর হতে যদি দেখ চাহি, পারিবে না চিনিতে আমায়। হে বন্ধু, বিদায়।” পোস্ট দেখা মাত্রই উৎকন্ঠায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন বন্ধুরা। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। ঘর থেকে উদ্ধার হয় গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তৃণমূল ছাত্র নেতার দেহ। মর্মান্তিক ঘটনা নৈহাটির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামাসুন্দরীতলা এলাকায়। মৃতের নাম সৌম্যকান্তি বিশ্বাস (২৮)।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নৈহাটির দোগাছিয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক করতে গিয়েছিলেন সৌম্যকান্তি। রবিবার সন্ধ্যে সাতটায় বাড়ি ফিরছিল ওই ছাত্র নেতা। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, বাড়িতে ফিরেও তিনি স্বাভাবিক আচরণই করেছিলেন। সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছিলেন। তারপর ফেসবুকের দেওয়াল বলছে, সন্ধ্যা সাতটার পরই তিনি একটি পোস্ট করেন। এই ফেসবুক পোস্ট ঘিরেই মৃত্যু রহস্য দানা বেঁধেছে।
সৌম্যকান্তির বন্ধুরা জানাচ্ছেন, তাঁর ফেসবুক পোস্টটা দেখার পরই যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সৌম্যকান্তির ফোন সুইচ অফ ছিল। নানাভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁরা পাননি। শেষমেশ তাঁরা বাড়িতে খোঁজ করতে যান। তখনই তাঁর মৃত্যুর ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। ভাইপোর মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছেন কাকা শুভব্রত বিশ্বাস। প্রিয় ছাত্র নেতার আকস্মিক প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে নৈহাটির শাসকদলে।
সৌম্যকান্তির কাকা বলেন, “ও দলকে ভালোবাসে। দলের প্রত্যেকে ওকে ভালোবাসে। সে একটা ছোটো কাজ করত, বাবা-মাকে দেখত। ওর বাবা কাজ করার শক্তি হারিয়েছেন। কেন এমনটা করল, কিছু বুঝতে পারছি না। আমি এমএলএ-কে বলব, ব্যাপারটা একটু দেখুন। কী কারণে হল, ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না।”
বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বললেন, “তিন দিন আগে একটা সমস্যার কথা ও আমাকে বলেছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গেই সমাধান করলাম। ও কেন আমাকে ওর অন্য সমস্যার কথা বলল না? এটাই আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।” তবে দলের তরফ থেকে যে সৌম্যকান্তির ওপর কোনও চাপ ছিল না, সে কথা বলেছেন বিধায়ক। সৌম্যকান্তি যে দলের জন্য প্রচণ্ড খাটতেনও সেকথা বলেছেন। বিধায়ক বলেন, “আমাদের এখানে তৃণমূল কর্মীদের ওপর কোনও রাজনৈতিক চাপ থাকে না। ও আমাদের লড়াকু সৈনিক। আজকের নয়, দীর্ঘদিনের।”
তবে কি সৌম্যকান্তির ব্যক্তিগত জীবনে কোনও টানাপোড়েন চলছিল? কোনও প্রেমের সম্পর্কের জেরেই কি এই ঘটনা? বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছে নৈহাটি থানার পুলিশ।
আরও পড়ুন: ‘মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ…ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে এই সৌজন্যতা দেখালে আমি আরও খুশি হতাম’