Sudan Crisis: নেই খাবার-জল, ৩০ হাজার টাকা বাস ভাড়া দিয়ে সুদান থেকে প্রাণ হাতে নিয়ে ফিরলেন অশোকনগরের সুরজিৎ

Dipankar Das | Edited By: অবন্তিকা প্রামাণিক

Apr 29, 2023 | 2:51 PM

Sudan Crisis: ১ মার্চ সুদানের রাজধানি খার্তুম পৌঁছন সুরজিৎ। পেশায় তিনি টেলিকম কোম্পানিতে সফটওয়্যারের কাজ করতেন। কিন্তু ১৫ তারিখ থেকেই সেখানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। সঙ্গে শুরু হয় গুলিবর্ষণ।

Sudan Crisis: নেই খাবার-জল, ৩০ হাজার টাকা বাস ভাড়া দিয়ে সুদান থেকে প্রাণ হাতে নিয়ে ফিরলেন অশোকনগরের সুরজিৎ
সুরজিৎ দে (নিজস্ব চিত্র)

Follow Us

অশোকনগর: নেই বিদ্যুৎ। হোটলের ঘরেই বন্দি দশায় দিন কাটিয়েছেন অশোকনগরের কল্যাণগড়ের বাসিন্দা সুরজিৎ দে। কারেন্ট না থাকার ফলে দিতে পারছিলেন না মোবাইলে চার্জ। নেই জল। নেই খাবার। চরম অসহায়তায় সুদানে দিন কাটাচ্ছিলেন বাঙালি এই ছেলে। একা সুরজিৎ নয়, সঙ্গে ছিলেন তাঁর সহকর্মীরাও। সে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ায় ফ্যাসাদে পড়েন তাঁরা। সারাক্ষণ বোমা-বারুদের শব্দে প্রাণ হাতেই হোটেল ঘরে বন্দি হয়েছিলেন সকলে। পরে ভারতীয় দূতাবাসের তৎপরতায় বাড়ি ফিরলেন সুরজিৎ।

১ মার্চ সুদানের রাজধানি খার্তুম পৌঁছন সুরজিৎ। পেশায় তিনি টেলিকম কোম্পানিতে সফটওয়্যারের কাজ করতেন। কিন্তু ১৫ তারিখ থেকেই সেখানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। সঙ্গে শুরু হয় গুলিবর্ষণ। সুরজিৎরা যে হোটেলে ছিলেন সেখানে লোডশেডিং শুরু হয়ে যায়। এক কথায় সারা দেশেই কারেন্ট ছিল না। প্রথম দিকে বারো দিন হোটেলের জেনারেটর এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘন্টা করে চালানো হত। পরে ডিজেল শেষ হয়ে যায়। এরপরেই তাঁদের মোবাইল চার্জ দেওয়ার সমস্যা হয়ে যায়। বাড়ির সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছিলেন না তাঁরা।

ফলে হোটেলের খাবার শেষ হয় যায় এবং জলের অভাব দেখা দেয়। কয়েক ঘণ্টার জন্য সিজ ফায়ার ঘোষণা হলেও জন্য তাও মানা হচ্ছিল না। সিজ ফায়ারের মধ্যেও অবিরাম গুলিবর্ষণ চলে। এরপরেই আতঙ্কিত ও মরিয়া হয়ে ওঠে সুরজিৎ এবং তাঁদের সঙ্গীরা। পালানোর পথ খুঁজতে থাকেন। ভারতীয় দূতাবাসের কাছে তারা নিরাপদ ভাবে দেশে পৌঁছানোর পরামর্শ চান। তাদের দেখানো পথেই সুরজিৎ সহ মোট ৪৯ জন মিলে ভারতীয় মুদ্রায় দশ লক্ষ টাকারও বেশি অর্থে বাস ভাড়া করেন। এক এক জনকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা করে বাস ভাড়া দিতে হয় । ৪৯ জন সেই বাসে করে জীবন বাজি রেখে ২৪ এপ্রিল রওনা হন পোর্ট সুদানে।

১২ ঘণ্টা ভয়াবহ জার্নি করে তাঁরা পোর্ট সুদানে পৌঁছন। মাঝেমধ্যেই বাস থামিয়ে তাদের চেকিং করছিলেন সে দেশের সশস্ত্র জওয়ানরা। সঙ্গে ছিল ভাষা সমস্যা। ফলে যে কোনও মুহূর্তে দু পক্ষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থেকে বচসা বাধলেই নিশ্চিত বুলেট চলতে পারত বলে জানান সুরজিৎ। এরপর পোর্ট সুদান থেকে তাদের ভারতীয় দূতাবাস ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে নেয়। সৌদি আরবের জেড্ডায় পৌঁছানো হয় তাঁদের।

পরবর্তীতে বিমানে করে ২৬ তারিখ তাঁরা দিল্লি এসে পৌঁছন। বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে দমদম এয়ারপোর্টে পৌঁছন সুরজিৎ এবং তার কয়েকজন সঙ্গী। কিন্তু যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি অশোকনগরের বাড়িতে ফিরেছেন। বাড়ির ছেলে ফিরে আসায় পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছেলেকে আর বিদেশে পাঠাবেন না। মাত্র কয়েক মাস আগেই সুরোজিতের বিয়ে হয়েছিল বিয়ের এক মাসের মধ্যেই কর্মসূত্রে যেতে হয়েছিল সুদানে। কিন্তু সুদানের যে অভিজ্ঞতা এই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়রের হল তাতে তিনি হতভম্ব। কোনও মতে প্রাণ হাতে নিয়ে বাড়িতে এসেছে ছেলে।

কান্নায় ভেঙে পড়েন সুরজিৎ এর মা। একমাত্র ছেলেকে যে এত তাড়াতাড়ি ফিরে পাবেন সেটাই ভাবতে পারছিলেন না মা রিতা দে। ছেলের দুঃস্বপ্নে এই কয়েকটা দিন ঘুমাতে পারেননি খেতে পারেননি বাবা স্বপন দে। তবে ভারতীয় দূতাবাসের তৎপরতার কথা স্বীকার করেছে সুরজিৎ এবং সুরজিৎ এর মা রিতা দে। সুরজিৎ জানান এখনো প্রায় আড়াই হাজার ভারতীয় যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে আটকে আছেন। তাদেরও মুক্তির কামনা করেছেন তিনি।

Next Article