বসিরহাট : চোখের জল নয়, মৃত্যুর পর তাঁকে যেন আনন্দ-উল্লাসের মধ্যে দিয়েই দাহ করা হয়। শেষ ইচ্ছা ছিল এটাই। পরিবারের সদস্যদের কাছে এই আবেদনই করেছিলেন বসিরহাট (Basirhat) পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভ্যাবলা তাঁতিপাড়ার বাসিন্দা ১০৯ বছরের সুভাষিনী দেউড়ি। বৃদ্ধার মৃত্যুর পর তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণ করলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। চোখের জলের বদলে আনন্দ-উৎসবের মধ্যেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হল ১০৯ বছরের বৃদ্ধার। স্বামী যজ্ঞেশ্বর দেউড়ি ২৫ বছর আগে মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগতে শুরু করেছিলেন ওই বৃদ্ধা। চিকিৎসাও হচ্ছিল। বর্তমানে চিকিৎসায় সাড়া দেওয়া বন্ধ করেছিলেন তিনি। শেষ সময় যে ঘনিয়ে আসছে তা টের পেয়েছিলেন বৃদ্ধা নিজেও। এরপরই নিজের আত্মীয়-স্বজন, ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনিকে তার মনের ইচ্ছার কথা জানান। এদিনই তাঁর জীবনাবসান হয়। তারপরই তাঁর শেষ ইচ্ছাপূরণে তোড়জোড় শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা।
এল ব্যান্ড পার্টি, বাজল ডিজে বক্স। ফুল দিয়ে বাঁশের চতুর্দোলা সাজিয়ে তাতেই চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হল দেহ। শতাধিক এলাকাবাসী প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তা অর্থাৎ বসিরহাটের ৭২ নম্বর রোড, টাকি রোড ও ইটিন্ডা রোডে মিছিল করে বসিরহাটের জামরুলতলায় শ্মশানঘাটে নিয়ে গেলেন ওই বৃদ্ধার দেহ। চলল দেদার নাচ। এদিন এই ছবিই দেখলেন বসিরহাটের পথচারীরা। শোকযাত্রায় যে বাজতে পারে ডিজে বক্স, বাজতে পারে চটুল গান, তা দেখে কেউ কেউ অবাক হলেন, কেউ আবার দিলেন মুচকি হাসি।
বৃদ্ধার এক নাতি অনদীপ মণ্ডল বলেন, “আমাদের ঠাকুমার বয়স ১০৯ বছর হয়ে গিয়েছিল। উনি চেয়েছিলেন যেন হাসিমুখে ওনাকে বিদায় জানাই। সে কারণেই আজ বক্স বাজিয়ে ওনাকে শ্মশানে নিয়ে যাচ্ছি। ১০৯ বছর যাঁর বয়স হয়, সেটা আনন্দেরই জিনিস। দুঃখের জিনিস নয়। তাই আজ আমরা উদযাপনে মেতে উঠেছি।” আর এক নাতি মিঠুন বলেন, “চোখের জলে নয়, আনন্দের সঙ্গে যেন নাতি-নাতনিরা বিদায় জানায়। ওনার শেষ ইচ্ছা ছিল এটাই। সে কারণেই আজ তাসা-ডিজে নিয়ে এসে নাচ-গানের মাধ্যমে আমরা ওনার শেষকৃত্য শেষ করছি। এটা করতে পেরে আমরা সবাই খুব খুশি।”