উত্তর ২৪ পরগনা: তরুণীর ছবি বিকৃত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করার হুমকি। টিটাগড় থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তরুণী। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার অপরাধ দমন শাখা। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
পুলিশ জানায়, এক তরুণীকে তাঁর মোবাইল ফোনে একটি লিঙ্ক পাঠানো হয়েছিল। আর তা ক্লিক করতেই বিপত্তি। তরুণীর বয়ান অনুযায়ী, তিনি সেই লিঙ্ক খুলতেই তাঁকে এই বলে মেসেজ পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, তিনি মোটা টাকা ধার করেছেন। টাকা ফেরত দিতে হবে। মোবাইল ফোনে তরুণীকে অশ্লীল মেসেজও পাঠানো হয় বলে অভিযোগ। তরুণীকে হুমকি দেওয়া হয়, ঋণের টাকা ফেরত না দিলে তাঁর ছবি বিকৃত করে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ওই তরুণী। তাঁর বন্ধু বান্ধব থেকে শুরু করে অফিসের সহকর্মীরা- সবার কাছে ওই তরুণীর ছবি সুপার ইম্পোজ করে মেসেজে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। তবে অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হওয়ায় আতঙ্কে ভুগছেন তরুণী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার ক্রাইমের এ এক অভিনব পন্থা। প্রতারণার নিত্য নতুন ফাঁদ পাতছে প্রতারকরা। সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কিছুদিন আগে এক সাংবাদিকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটে।” কীভাবে লিঙ্কে ক্লিক করলে ফেঁসে যাবেন আপনি? কীভাবে বা আগে থেকে লিঙ্ক দেখে সতর্ক হবেন? এবার তাই বিশদে জানালেন সাইবার বিশেষজ্ঞ।
সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আসলে এই লিঙ্কগুলো ক্লিক করলে একটা এপিকে ফাইল কিংবা একটা অ্যাপ ইনস্টল হয়ে যাচ্ছে। সেটা ইনস্টল হওয়ার পর আমাদের সব ডেটা তথ্য প্রতারকদের কাছে চলে যাবে। আমাদের নামে লোন নিচ্ছে তারা। কে লোন নিচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে, তা কিছুই জানতে পারছেন না প্রতারিত। এই লোন অ্যাপ কোম্পানিগুলি যেগুলি তৈরি হয়েছে, সেগুলি না আরবিআই গাইডলাইনে চলে না আমাদের সরকারি অর্গানাইজেশনের গাইডলাইনে চলে। এটা প্যান্ডামিকের শুরু থেকে শুরু হয়েছে। আসলে মানুষের হাতে টাকাপয়সার চাপ। লোনের জন্য যাচ্ছেন অনেকে। ফলে এই লোন অ্যাপগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরা যত টাকা ধার দেয়, তার প্রায় ১০০ গুণ বেশি সুদ নিয়ে নেয়। এখন যেটা শুরু করেছে, লোন নিতেই হবে না। লিঙ্ক পাঠিয়ে দেয়. তা ক্লিক করলেই অ্যাক্টিভেট হয়ে যাচ্ছে। তারপর কনট্যাক্ট লিস্ট থেকে নম্বর নিয়ে বিভিন্ন নম্বর ছবি পাঠিয়ে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করছে।”
সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ইদানীং শহরে সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাইবার ক্রাইম। এটাই এখন পুলিশের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এরকম একাধিক প্রতারণার ফাঁদ ফেলছে প্রতারকরা। নিত্য নতুন জাল বিছোচ্ছে তারা। নতুন নতুন লোকে জালে ফেলছে। এই ধরনের যে রকম ফোন এলে, সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সঙ্গে সঙ্গেই সাইবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলছেন তাঁরা। যে কোনও লিঙ্কেই ক্লিক না করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: Fraud Case: ‘নাম জড়িয়েছে সেক্স ব়্যাকেটে’, ফোন করেই ফেঁসে গেলেন ‘পুলিশ ইন্সপেক্টর’