দত্তপুকুর: বারাসত-ব্যারাকপুর রোডের নীলগঞ্জ যেন বেআইনি বাজির হাব। সেখানকার প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই বাজি তৈরি হত। সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, এটাই নাকি একাংশের রুজি-রুটির সওয়াল। কেউ নিয়মিত কাজ করেন, কেউ বা চুক্তিভিত্তিক। রোজও খুব কম। আবার খুব কম লাভেই বাজি বিক্রি করেন তাঁরা। ধরুন কেউ ১০০ টাকা বাজি বাঁধলেন, তাহলে হাতে পেতেন ১১০টাকা। জীবনকে বাজি রেখেই বাজি বাঁধতেন যাঁরা, তাঁদের মুখেই শোনা গিয়েছে এই কথা। TV9 বাংলার প্রতিনিধি চষে বেড়ালেন নীলগঞ্জের সেই পাড়া। যেখানে অন্তত সব পাড়াতেই রয়েছে বাজি ‘কারখানা’। আর সেই পাড়া চষতে গিয়েই TV9 বাংলার হাতে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। অনেক বাড়িতে তৈরি হত নিষিদ্ধ বাজি। আর সেই বাজি পাচার হত অভিনব কায়দায়। গুঁড়ো দুধের বাক্সে পাচার করা হত নিষিদ্ধ সেল বাজি।
রবিবারের বিস্ফোরণের পর এই এলাকার বেআইনি বাজির কারবার সামনে চলে আসে। মূল ঘটনাস্থল মোজপুর গ্রাম সংলগ্ন বন্ধ ইট ভাটার জমিতে গড়ে উঠেছে নিষিদ্ধ সেল বাজির কারখানা। এই বাজি কারখানায় সেল বাজি তৈরি থেকে প্যাকিং হত। কারখানা থেকে সেল বাজি বাজারে পাঠানোর জন্য আমূল-স্প্রে গুঁড়ো দুধের বাক্স ব্যবহার করা হত। যা ধরা পড়ে TV9 বাংলার ক্যামেরায়।
রবিবারের পর সেই কারখানায় চলে ভাঙচুর। বেআইনি বাজি কারখানাকে লুকিয়ে রাখতে আরও একাধিক পন্থা নেওয়া হয়েছিল। কারখানায় ‘কিরণ ফায়ার ওয়ার্কস ব্র্যান্ড’ নামে তৈরি হচ্ছিল বাজি। আর সেখান থেকে যে বিল বই পাওয়া যায়, সেটি আবার ‘কিরণ ভ্যারাইটি স্টোর্সের’ নামে। এখানেও স্পষ্ট বেআইনি কারবার লুকিয়ে রাখতে ওই কারখানাকে ‘ভ্যারাইটি স্টোর্স’ হিসেবে দেখানো হচ্ছিল। তার আড়ালেই চলত বাজি পাচার।
বলাই বাহুল্য, এত কিছু যখন হচ্ছে, তখন পুলিশ কী করছিল? গ্রামবাসীদের একাংশই পুলিশের বিরুদ্ধে সরব। রবিবার দিনভর পুলিশের বিরুদ্ধে একাধিক ক্ষোভ সংবাদমাধ্য়মের সামনে উগরে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। কেউ বলেছেন, “পুলিশ এখানে এটিএমের মতো কাজ করত”, কেউ বলছেন, ‘পুলিশ সব জেনেও, যাঁরা প্রতিবাদ করেছেন, তাঁদেরকে পাল্টা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন’। একই অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। মন্ত্রী রথীন ঘোষ অবশ্য বলছেন, তিনি কিছুই জানতেন না এসবের। তবে সোমবার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন খোদ পুলিশ মন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আপাতত এই ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। সোমবার সকালেই দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন এনআইএ-এর দুই আধিকারিকরা। তাঁরা মিনিট পনেরোর জন্য দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে এখনই সরকারি ভাবে দায়িত্ব নিচ্ছে না এনআইএ। আপাতত নীলগঞ্জের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বিস্ফোরক রাখা ও মজুতে গাফিলতি, অনিচ্ছাকৃত খুন, অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু, একই উদ্দেশ্য নিয়ে অপরাধ করার ধারা দেওয়া হয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। এছাড়া, তথ্যপ্রমাণ আইন ও দমকল আইনের ধারাও যুক্ত করেছে পুলিশ।