বসিরাহাট: সাংবাদিক (Journalist) -এর পরিচয় দিয়ে এলাকা যেন দাপিয়ে বেড়াতেন তিনি। কাউকে কারণে অকারণে মারধর করতেও পিছপা হতেন না। একটা চারচাকা গাড়ি নিয়ে বেরলে তাঁর দাপটই আলাদা। রেয়াত করতেন না কাউকে। এদিকে গ্রামবাসীর মনে প্রশ্ন জাগে, সত্যিই কি ইনি সাংবাদিক? তাও যদি হয়, তবে এমন দাদাগিরি কেন? এ নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন তাঁরা। তার পর বসিরহাটে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রেসের স্টিকার লাগানো গাড়ি সহ একজনকে আটক করল পুলিশ। জানা গেল, তিনি ভুয়ো সাংবাদিক। পরিচয় ভাঁড়িয়ে এতদিন এলাকা দাপিয়ে বেড়াতেন। রাজ্যে ভুয়োর তালিকায় এবার নয়া সংযোজন নকল সাংবাদিক!
বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থানার কৈজুড়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাদুরিয়া গ্রাম। এখানেই বছর ২১-এর যুবক জনৈক জাহিদ খানকে গ্রেফতার করেছে স্বরূপনগর থানার পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ মারাত্মক। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় চারচাকা গাড়ি ছুটিয়ে পুলিশের নেকনজরে পড়েন তিনি। গাড়িতে লাগানো ছিল ‘প্রেস’ লেখা স্টিকার। পুলিশ গাড়ি আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা যায়, সাংবাদিকের স্টিকার লাগিয়ে বিভিন্ন কার্যকলাপ চালাতেন ওই যুবক। ধৃতের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অবশেষে তাঁকে গ্রেফতার করল পুলিশ। জানা গিয়েছে, ধৃতের আদি বাড়ি বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায়। তবে গত ৩ বছর আগে স্বরূপনগরের ভাদুরিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে এসে বসবাস করতেন তিনি। সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে সবাইকে চমকে বেড়ালেও আদতে একটি ঠিকাদারি সংস্থায় কাজ করতেন ওই যুবক।
উত্তরপ্রদেশে মুরাদাবাদ একটি ঠিকাদার সংস্থায় কাজ করতেন ধৃত বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তবে করোনা আবহে প্রথম লকডাউনে সে কাজ ছেড়ে মামার বাড়িতে এসে বসবাস শুরু করে জাহিদ। তার পর একটি চারচাকা গাড়ি কিনে তাতে প্রেসের স্টিকার লাগিয়ে সীমান্ত এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন তিনি বলে অভিযোগ। এদেশে থাকার তাঁর কোনও বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, সাংবাদিকের ভুয়ো স্টিকার লাগিয়ে নিজেকে সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে এলাকায় নানারকম কাণ্ডকারখানা করে বেড়াতেন এই যুবক। তাঁর গাড়িটিকে আটক করেছে পুলিশ। তাছাড়া যে বাড়িতে ধৃত বসবাস করতেন, সেই বাড়ির লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে স্বরূপনগর থানার পুলিশ।
সেই কসবার (Kasba) দেবাঞ্জন কাণ্ড থেকে শুরু। তার পর নিয়মিত ভাবে এ রাজ্যে গ্রেফতার হচ্ছে ভুয়ো সিবিআই, ভুয়ো আইএএস, ভুয়ো বিচারক, ভুয়ো সেনা অফিসার, ভুয়ো ডিআইজি, ভুয়ো আইপিএস বেরিয়েছে এ রাজ্যে। এই তালিকা দীর্ঘ। একবার গুনে শেষ করা যাবে না গত কয়েক মাসে ভুয়ো গ্রেফতারির তালিকা। কয়েকদিন আগে জলপাইগুড়িতে গ্রেফতার হয়েছেন এক ভুয়ো চিকিৎসক। এবার সেই নকলদের বিশাল তালিকায় নবতম সংযোজন হল ভুয়ো সাংবাদিক (fake journalist)।