বেলঘড়িয়া: পুলিশের কাজে স্তম্ভিত আন্দোলনকারী অরুণিমার পরিবার। বুধবার প্রিজন ভ্যান থেকে অরুণিমা দেখাচ্ছিলেন, কীভাবে তাঁর হাতে কামড়ে দিয়েছে পুলিশ। কীভাবে ছুটে গিয়ে এক মহিলা পুলিশ তাঁকে টেনে আনেন, সেই দৃশ্যও প্রকাশ্যে এসেছে। আর সারারাত লালবাজারে বসে চিকিৎসার আর্জি জানালেও, পুলিশ সাহায্য করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, অন্যান্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অরুণিমার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছে। এই ঘটনাক্রম দেখার পর খাওয়া-ঘুম ছেড়েছে অরুণিমার পরিবার। বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন তাঁর স্বামী-সন্তান।
অরুণিমার স্বামী সাধন পাল জানান, সারা রাত তিনি ও তাঁর মেয়ে ঘুমোতে পারেননি। সকালে কাজেও যেতে পারেননি। কথা হয়েছে স্ত্রীর সঙ্গে। অরুণিমা জানিয়েছেন, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি, অথচ চিকিৎসা করাচ্ছে না পুলিশ।
বুধবারের ঘটনা সম্পর্কে সাধন বাবু বলেন, ‘আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। টিভিতে নিজে চোখে দেখেছি, একজন মহিলা পুলিশ আমার স্ত্রীকে কামড়ে দিচ্ছে। আমার স্ত্রী অধিকারের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন।’ পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা বিরল ঘটনা। যে রক্ষা করবে, সেই এভাবে কামড় দিচ্ছে! লজ্জাজনক ঘটনা।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাঁর আবেদন, ‘আমার স্ত্রী একজন মহিলা, আপনিও মহিলা। এই ঘটনার বিচার হোক।’ তাঁর আর্জি, মানবাধিকার কমিশন এগিয়ে আসুক।
মেয়ের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে অবাক হয়ে যাচ্ছেন মা অলকাদেবীও। তিনি বলেন, এটা কোনও সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না। মেয়ে বাড়ি থেকে গেল চাকরির দাবি জানাতে। সেটা জানানোটা কি অপরাধ? তাঁকেই কাঠগড়ায় তুলে আটকে দেওয়া হল? কোন সভ্য সমাজে এমনটা ঘটে?
তিনি আরও বলেন, আমরা পশুদের দেখেছি, তাদের ওপর হামলা করলে তারা কামড়ায়। কিন্তু এভাবে একজন মানুষ আর একজন মানুষকে কামড়াল, এই দৃশ্য ৭০ বছরের জীবনে প্রথম দেখলাম। আর রাতে লালবাজারে পুলিশ যেভাবে বলেছে, ‘ওঁ যদি মারা যায় সেই দায় আমরা নেব’, তাতে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অলকাদেবী। আপাতত মেয়ের মুক্তির জন্য অপেক্ষা করছেন, বেলঘড়িয়া বাটার গলির বাসিন্দা অরুণিমার পরিবার।
পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে একজোট হয়ে সোজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল চাকরি প্রার্থীদের। হকের চাকরির দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, তার জেরেই বুধবার রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এক্সাইড, ধর্মতলা চত্বর। পুলিশ টেনে হিঁচড়ে আন্দোলনকারীদের তুলতে শুরু করে। মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। প্রিজন ভ্যানে যখন তাঁদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন ক্ষতচিহ্ন দেখান অরুণিমা। অভিযোগ, তাঁর হাতে কামড়ে দেওয়া হয়েছে। পরে তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হয়। অভিযোগ, রাতে তিনি অসুস্থ বোধ করলেও পুলিশ কোনও সাহায্য করেনি।