Sandeshkhali Sheikh Shahjahan: ‘সম্রাট’ শাহজাহানের সাম্রাজ্যে নাকি খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কথাও চলে না! কেন জানেন?

সিজার মণ্ডল | Edited By: শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী

Jan 06, 2024 | 2:08 PM

Sandeshkhali:পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে বিজেপি কর্মী অপহরণ ও খুনে অভিযুক্ত ছিলেন শাহজাহান। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি পুলিশ। পরিবার অভিযোগ তুলছে, একাধিক ওই এলাকায় পুলিশকেও মার খেতে হয়েছে।

Sandeshkhali Sheikh Shahjahan:  সম্রাট শাহজাহানের সাম্রাজ্যে নাকি খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কথাও চলে না! কেন জানেন?
শেখ শাহজাহান
Image Credit source: Facebook

Follow Us

কলকাতা: সন্দেশখালির প্রত্যন্ত গ্রাম সরবেরিয়া। সেই গ্রামেরই আরও প্রত্যন্ত এলাকা আকুঞ্জবেরিয়া। এক সময়ে যার খাওয়া জুটত না, সেই শেখ শাহজাহানের ‘অনুগামীরাই’ বাংলার মাটিতে ঘটাল নজিরবিহীন ঘটনা, এমনটাই অভিযোগ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের মাথা ফাটিয়ে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের তাড়া করে কলাবাগান দিয়ে দৌড় করিয়ে ভয়ঙ্কর নজির গড়ল। আর এর পর থেকেই শেখ শাহজাহান কত বড় দাপুটে নেতা, সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

শাহজাহানের উত্থান বাম আমলে। সরবেরিয়া অঞ্চলের এক সময়ের পঞ্চায়েত প্রধান শেখ মোসলেমের সহকারি (সম্পর্কে ভাগ্নে) ছিলেন শেখ শাহাজাহান। শোনা যায়, বাহুবলী হিসাবে এলাকার ইট ভাটা ও ভেড়ি থেকে তোলা আদায়ের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। দাপট একসময়ে এমন বাড়ে, যে মোসলেমকেও ছাপিয়ে যান তিনি। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন ও ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের দাপটের মধ্যেও সন্দেশখালি অঞ্চল নিজেদের দখলে রেখেছিল বামেরা। অনেকের মতেই এর সৌজন্যে শাহজাহান। জেলা রাজনীতির অলিন্দে কান পাতলে শোনা যায়, দাপট ধরে রাখতেই ২০১৩ সালে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন শাহজাহান। ২০১৫ সালে সরকারি বাস রুট বন্ধ করে দেন শাহজাহান। বদলে ওই রুটো অটো চালাতে শুরু করেন শাহজাহানের অনুগামীরা। সে সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর নজরেও বিষয়টি আসে। তখন তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, কে এই শেখ শাহজাহান? সে সময়ে দল থেকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী।

দলেরই এক সূত্রের খবর, শেখ শাহাজাহানের একাধিক কীর্তি কলাপে একাধিকবার উষ্মা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তারপরও তাঁর দাপট কমেনি। বরং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে, বলছেন এলাকাবাসীরাই। সূত্র বলছে, ২০১৩ সালের পরবর্তী সময় থেকে সন্দেশখালি ১ ও সন্দেশখালি ২ ও তার সন্নিহিত এলাকাজুড়ে শেখ শাহজাহানের দাপট ক্রমেই বাড়তে থাকে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে বিজেপিকর্মী অপহরণ ও খুনে অভিযুক্ত ছিলেন শাহজাহান। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি পুলিশ। পরিবার অভিযোগ তুলছে, ওই এলাকায় একাধিক পুলিশকেও মার খেতে হয়েছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “শাহজাহান শেখের পোষা রোহিঙ্গা গুন্ডারা হামলা চালিয়েছে। তারাই এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এখানে রোহিঙ্গা বস্তি বসিয়েছে শাহজাহান শেখ।” যদিও শাসকদলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “রোহিঙ্গা যদি ঢুকে থাকে, যদি অনুপ্রবেশ হয়ে থাকে, তোমরা অভিযোগ তুলছো, দায় তো তোমার অমিত শাহ।””

দলেরই একাংশ বলছে, শেখ শাহজাহানের দাপট এতটাই বেশি ছিল যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশও কাজ করত না কখনও কখনও। আমফানের পর মুখ্যমন্ত্রী সেখানকার ত্রাণ তালিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ প্রকাশের পর নতুন করে ত্রাণের তালিকা তৈরি করছিলেন সন্দেশখালি ২ নম্বরের বিডিও। কিন্তু সেই বিডিওকেই গাছে বেঁধে মারার অভিযোগও ওঠে শাহজাহানের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। শাহজাহান-বাহিনী প্রশ্ন তোলে, কেন বদল করা হবে ত্রাণের তালিকা?

রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী অভিযোগ করেন, শাহজাহানের এলাকায় ত্রাণ দিতে গিয়ে গলাধাক্কা খেয়েছিলেন তিনি। ১০ মিনিটের মধ্যে সে ত্রাণ লুঠ হয়েছিল শাহজাহান-সেনার হাতে। সিদ্দিকুল্লার কথায়, “মূল মস্তান হল শাহজাহান। দল যদি রশি ছেড়ে দেয়, সিদ্দিকুল্লার মুখ কিন্তু বন্ধ থাকবে না। অনুভব করলাম লোকাল মস্তানদের কাছে পুলিশও অসহায়। শাস্তি না দিলে তৃণমূলের আখেড়ে ক্ষতি হবে।”

কিন্তু এই ‘মস্তানে’র কীভাবে এত ‘ফ্যান ফলোয়ার্স’? সরবেরিয়ার আকুঞ্জবেরিয়ায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, আসলে মাছের ভেড়ি, আর ইট ভাটার ব্যবসায় প্রচুর টাকার মালিক শেখ শাহজাহান। সেই টাকার একটা অংশ এলাকার গরিব মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে তাঁদের কাছে ‘মসিহা’ হয়ে উঠেছিলেন শাহাজাহান। তাঁর নির্দেশ ছাড়া নাকি এলাকায় মাছিও গলতে পারে না। পুলিশ প্রশাসন হোক, কিংবা বিধায়ক নেতা ওই এলাকায় ক্ষমতা নেই আর কারোরই! মুখ কাপড়ে ঢেকে সেকথা জানাচ্ছেন এলাকার অনেকেই

Next Article