উত্তর ২৪ পরগনা: বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। তবে বর্তমান খাদ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করলেও তোপ দাগলেন প্রাক্তন তথা রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্ত মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। তাঁকে ‘ঘুঘু’ বলে কটাক্ষ করেছেন শান্তনু।
শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন, তিনি এখনও পর্যন্ত রথীন সেনের বিষয়ে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ পাননি। তবে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভূরি-ভূরি অভিযোগ রয়েছে। জ্যোতিপ্রিয়কে ‘ঘুঘু’ বলে কটাক্ষ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আমরা জানতাম উনি গভীর জলের ঘুঘু। আর ওনার ঘুঘুগিরিতে যাঁরা সহায্য করছেন তাঁদেরও টেনে শ্রীঘরে ঢোকানো হচ্ছে।”
সোমবার কেন্দ্রীয় এজেন্সিরও কাজের প্রশংসা করেন শান্তনু। তদন্ত সঠিক দিকে এগোচ্ছে বলতে গিয়ে তিনি জানান, “রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে আর যাঁরা-যাঁরা জড়িত রয়েছে, তাঁদের সবাইকে ‘ট্রিটমেন্ট’ দেওয়া হবে। এর জন্য ইডি-কে ধন্যবাদ।’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এও বলেছেন, “সঠিক রোগ খুঁজে পাওয়া গেছে।” তাঁর বক্তব্য, এতদিন রোগটি কী তা স্পষ্ট হচ্ছিল না। এখন তা জানার পর তার চিকিৎসাও শুরু হয়ে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, পুরনিয়োগ নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে গিয়ে প্রথম রেশন দুর্নীতির হদিশ পান ইডি আধিকারিকরা। গ্রেফতার করা হয় চালকলের মালিক বাকিবুরকে। তাঁকে জেরা করতেই নাম উঠে আসে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। তদন্ত এগোতেই গোয়েন্দারা জানতে পারেন বড় অঙ্কের টাকার দুর্নীতি হয়েছে রেশনে। এরপর একে একে নাম উঠে আসে শঙ্কর আঢ্য ও শাহজাহানের। আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বিষয়টি।
তবে জ্যোতিপ্রিয়র সঙ্গে শান্তনু ঠাকুরের ঝামেলা আজ নতুন নয়। তৃণমূলের একাংশ মানেন, দুঃসময়ে মমতার সৈনিক ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। উত্তর ২৪ পরগনায় তিনিই ছিলেন অঘোষিত ‘জেলার মুখ্যমন্ত্রী’। তাঁর অঙ্গুলিহেলনেই চলত জেলার প্রশাসন। ২০১১ সালে মঞ্জুল কৃষ্ণ ঠাকুর গাইঘাটা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। তাঁর সঙ্গে বরাবরই বিবাদ ছিল দাদা কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের। জেলার অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, জ্যোতিপ্রিয়র ‘আশীর্বাদে’ ২০১৪ সালে তিনি সাংসদ হন। সেই সময় থেকে পারিবারিক বিবাদ পৌঁছয় রাজনৈতিক কচকচানিতে। এরপর কপিলকৃষ্ণর মৃত্যু হলে তৃণমূল প্রার্থী করে মমতা বালা ঠাকুরকে। অপরদিকে, শান্তনু ঠাকুরের দাদা সব্রত ঠাকুরকে প্রার্থী করে বিজেপি। মঞ্জুলও চলে যান বিজেপিতে। তবে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আরও বাড়ে যখন মমতা ঠাকুর জিতে যান। অভিযোগ, সেই সময় শান্তনু ঠাকুরদের উপর অত্যাচার করা হত। ফলে, বালু জেলে থাকলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ‘বাণে’ যে তিনি বিদ্ধ হবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।