Matua Thakurbari: মতুয়ায় ‘মাতোয়ারা’ রাজনীতির অলিন্দ, এই ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস জানেন?

Matua Dharma: মতুয়া শব্দের অর্থ হল মেতে থাকা, মাতোয়ারা। সনাতন হিন্দুধর্মের এক বিশেষ সম্প্রদায় ধীরে ধীরে পরিচিত হয় মতুয়া নামে। এই ধর্মের উৎসকাহিনীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভক্তিভাবের উৎসার। বাংলাদেশের ওড়াকান্দির মানুষ ছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর। প্রেমভক্তির মন্ত্রেই ভর করে মুক্তির পথে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি।

Matua Thakurbari: মতুয়ায় 'মাতোয়ারা' রাজনীতির অলিন্দ, এই ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস জানেন?
মতুয়া সম্প্রদায়ের উৎসব। Image Credit source: Facebook
Follow Us:
| Updated on: Apr 08, 2024 | 11:59 PM

বনগাঁ: বনগাঁর ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ি। এক সময় এ বাড়িতে গিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, গিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ পরিবারেরই এক সদস্য দেশের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী, আরেকজন রাজ্যসভার সাংসদ। প্রথমজন শান্তনু ঠাকুর, দ্বিতীয়জন মমতাবালা ঠাকুর। মতুয়াধর্মের পীঠস্থান হিসাবে চিহ্নিত ঠাকুরনগরের এই বাড়ি। রবিবার রাতে সেখানেই বড়মার ঘরে কার অধিকার, তা নিয়ে শুরু হয় ‘দড়ি টানাটানি’। এবং তার সঙ্গে আরও অনেক কিছুই ঘটে গত ২৪ ঘণ্টায়। এই আবহে একবার দেখে নেওয়া যাক মতুয়া সম্প্রদায়ের শিকড়ের গল্প।

মতুয়া কারা

মতুয়া শব্দের অর্থ হল মেতে থাকা, মাতোয়ারা। সনাতন হিন্দুধর্মের এক বিশেষ সম্প্রদায় ধীরে ধীরে পরিচিত হয় মতুয়া নামে। এই ধর্মের উৎসকাহিনীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভক্তিভাবের উৎসার। বাংলাদেশের ওড়াকান্দির মানুষ ছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর। প্রেমভক্তির মন্ত্রেই ভর করে মুক্তির পথে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। তাঁর সহজ সরল জীবনদর্শন ক্রমেই অন্যান্যদের আকৃষ্ট করতে থাকে। বাড়তে থাকে ভক্তের সংখ্যা। মতুয়ারা হিন্দু ও বৈষ্ণবধর্মের অনুসরণকারী। তাঁদের বিশ্বাস মুক্তির পথ ভক্তিতে। বর্ণপ্রথা নয়, মানবতাতেই বিশ্বাস রাখেন তাঁরা। বিশ্বাস করেন নারী-পুরুষের অধিকারে কোনও ভেদ নেই।

ওপার বাংলা থেকে মতুয়ারা এলেন এপার বাংলায়

হরিচাঁদ ঠাকুরের মৃত্যুর পর এই বিশেষ সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিয়ে চলেন তাঁর ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুর। ১৯৩০ সালে গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রয়াণের পর তাঁর নাতি প্রমথরঞ্জন ঠাকুর বা পিআর ঠাকুর মতুয়া সম্প্রদায়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। ১৯৫০ সালের পর যখন পূর্ব পাকিস্তান থেকে লক্ষ লক্ষ কৃষক পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন, তাঁদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়। মূলত তাঁরা নমঃশূদ্র ছিলেন। ১৯৬০ সাল থেকে এই কৃষকরা পুনর্বাসনের জন্য আন্দোলন শুরু করেন। পিআর ঠাকুর তাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

বড়মা ও ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ি

পিআর ঠাকুরের সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল বরিশালের বীণাপাণি দেবীর। ১৯৪৭ সালের পর পরিবারের সঙ্গে তিনিও চলে আসেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। গৃহহারা মতুয়াদের জন্য স্বামীর সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন ঠাকুরনগরে উদ্বাস্তুদের থাকার ঠিকানা। এই বীণাপাণি দেবীই মতুয়াভক্তদের কাছে বড়মা। ১৯৯০ সালে পিআর ঠাকুরের প্রয়াণের পর বড়মা মতুয়া মহাসংঘের দায়িত্ব নেন। গোটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেন হরিচাঁদ ঠাকুরের আদর্শকে। ২০১০ সালে বড়মাকে মতুয়া মহাসংঘের অভিভাবক হিসাবে ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৮ সালে রাজ্য সরকার তাঁকে বঙ্গবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত করে। ২০১৯ সালে প্রয়াত হন তিনি।

বড়মার সন্তান

বড়মার বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর, ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুর। তাঁদের কন্যাসন্তান রয়েছে। অন্যদিকে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের দুই সন্তান শান্তনু ঠাকুর ও সুব্রত ঠাকুর।

রাজনীতির পদচারণ

এক সময় যে ঠাকুরবাড়ি শুধুই ধর্মকর্মের পীঠস্থান ছিল, রাজনীতির অঙ্গুলিহেলনে তা আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে। মমতাবালা তৃণমূলে, শান্তনু বিজেপিতে। বড়মার মৃত্যুর পর থেকেই সঙ্ঘাধিপতি কে হবেন তা নিয়ে বিবাদ রয়েছে। মমতাবালা দাবি করেন, তিনিই বড়মার যোগ্য উত্তরসূরী। শান্তনু আবার তা মানতে নারাজ। ঠাকুরনগরে যে মূল ঠাকুরবাড়ি, যে বাড়িতে বড়মা থাকতেন, সেখানেই থাকেন মমতাবালা। পাশেই থাকেন শান্তনু ঠাকুররা। রবিবার ৭ এপ্রিল রাতে সেই বাড়িতেই শান্তনু ঠাকুররা এসে উপস্থিত হন বলে অভিযোগ। বড়মার ঘরের দাবি নিয়ে তাঁরা সরব হন বলে মমতাবালা অভিযোগ তোলেন। পাল্টা শান্তনু জানান, এ ঘর তাঁর ঠাকুরদাদার। কোনও আইন তাঁকে এই অধিকার থেকে আটকাতে পারে না।