কৃষ্ণগঞ্জে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
Image Credit source: Facebook
নদিয়া: ‘নবজোয়ার কর্মসূচি’ সেরে এবার জেলায় পঞ্চায়েতের প্রচারে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নদিয়া কৃষ্ণগঞ্জে সভা করলেন তিনি। নবজোয়ার কর্মসূচিতেই তাঁর এখানে আসার কথা ছিল। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে সেই সভা বাতিল করা হয়। ঠিক একই স্থানে এবার সভা করলেন অভিষেক। দেখুন এক নজরে অভিষেক কী বললেন…
KEY HIGHLIGHTS
-
- আজ থেকে ঠিক ১৫-২০ দিন আগেই এই মাঠেই আমার সভা করার কথা ছিল। সেদিন খুব বৃষ্টি হয়েছিল। মাঠে জল জমে গিয়ে, শর্ট সার্কিট হয়ে গিয়ে বিপত্তি হয়েছিল। সভাটা সেদিন হয়নি। আমি এই রাস্তাটা দিয়েই গিয়েছিলাম। সেদিন যখন বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার ধার দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কাতারে কাতারে মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ।
- ২০১৯-২১ – আপনারা ভারতীয় জনতা পার্টিকে বিশ্বাস করেছেন, বিশ্বাসের মূল্য এরা দিতে পারেনি। তাই এবার শুনে নয়, দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ২০১৯ সালে বিজেপি প্রার্থী ২ লক্ষের বেশি ব্যবধানে জিতেছিল, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে আমরা শুধুমাত্র নবদ্বীপ জিতেছিলাম। পরবর্তীকালে শান্তিপুরে উপ নির্বাচন হয়েছিল, নবদ্বীপ ও শান্তিপুর ছাড়া বাকি আসনগুলোতে বিজেপির প্রার্থীরা জিতেছিল। আপনারা তিন-চার বছর ধরে বিজেপি-র প্রার্থীদের জিতিয়েছেন। একবারের জন্য তাঁদেরকে পাশে পেয়েছেন?
- তৃণমূল হয়তো আপনার সুখে ছিল না, দুঃখে-বিপদে রয়েছে। দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে গিয়ে কোনও সমস্যা হলে সাহায্য করে তৃণমূলেরই ছেলে। বিজেপির কোনও ছেলে নয়। রাতে বাড়িতে আগুন লাগলে দমকল নিয়ে তৃণমূলের ছেলেগুলোই দৌঁড়য়। বিজেপির ছেলে নয়। বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্সটা ডাকার কাজও তৃণমূল করে। বহিরাগতদের নেতাদের আপনারা চোখে দেখতে পান না।
- একদিকে, আমাদের সরকার দিচ্ছে, আর অন্যদিকে দিল্লির সরকার নিচ্ছে। আপনি কাকে ভোট দেবেন?
- একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রেখে, বাংলার মানুষকে শোষন করতে চাইছে।
- এই নদিয়ায় ৮ টা আসনে তৃণমূল হেরেছে, কিন্তু একজন বিজেপি নেতা কর্মীর বউ বলতে পারবেন না, তাঁরা লক্ষ্মীর ভান্ডার পাচ্ছেন না। সিপিএমের নেতা বলতে পারবেন না, স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড পাননি।
- যাঁরা ধর্মের নামে ভোট চেয়েছিল, দেখুন আপনার অধিকার থেকে আপনি বঞ্চিত।
- বলেছিল CAA করব। বিল পাশ হয়েছে। কিন্তু সেটা বলার পর ৪২ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিলের রুল ফ্রেম হয়নি।
- ১৯ লক্ষ লোককে এনআরসি করে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১২ লক্ষ হিন্দু বাঙালি। বাঙালি বিদ্বেষের প্রমাণ বারবার পেয়েছেন।
- আপনার হাতে রিমোট কন্ট্রোলের বোতাম, মানুষের হাতে ইভিএমের বোতাম। মানুষ যদি ঠিক করে আপনাকে টেনে হিঁচড়ে নীচে নামাতে ১০ সেকেন্ডও সময় লাগবে না।
- ১৫ দিন আগে আমি ঠাকুরবাড়িতে গিয়েছিলাম, পুজো দেব, দর্শন করব বলে। শান্তনুবাবু গেট বন্ধ করে দিল। আমি বাংলার সন্তান। আমাকে ঢুকতে দিল না। আর যাদের হাতে রক্ত লেগে রয়েছে, তাদের পদলেহন করে চলেছে। তাদের ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে যায়। এদের কী বলবেন। উনি সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে বলছেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় না জানিয়ে মন্দিরে গিয়েছে, কোনও দিন শুনেছেন ঠাকুরের মন্দিরে যেতে গেলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লাগে? কার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেব? ভগবানের?
- ওরা বলছে মন্দিরে গেলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে যেতে হবে। কী ধরনের হিন্দুত্ব ওরা স্থাপন করতে চাইছে?
- আপনি দেখান জগন্নাথ সরকার এই চার বছরে আপনাদের সঙ্গে কথা বৈঠক করেছেন? কী কাজ করেছেন এলাকায়।
- আমরা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও দল থেকে বার করেছি। মন্ত্রীত্ব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে বিজেপি কী করছে? যাদেরকে টিভিতে দেখা গিয়েছে, খবরের কাগজে মুড়িয়ে টাকা নিয়েছে, তাদেরকে মাথায় বসিয়েছে।
- মানুষ যাকে চেয়েছে, তাকেই প্রার্থী করেছি। তাতে কেউ রাগ করুক, আমাদের কিছু আসে যায় না। আপনার পছন্দের লোককে যদি প্রার্থী করি, আপনাকেই জেতাতে হবে। এটা আপনার দায়িত্ব।
- এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে আমরা দিল্লি চলোর ডাক দেব। মানুষকে লড়াই করতে হবে নিজের স্বার্থে। উন্নয়নের স্বার্থে টাকা ছিনিয়ে আনতে হবে। দিল্লির বুকে ১০ লক্ষ বাংলার মানুষকে নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করে প্রাপ্য টাকা ছিনিয়ে আনতে হবে। দিল্লি অচল করতে হবে। আপনাকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমার। আন্দোলনে বসার দায়িত্ব আমার।
- আমি এক কথার ছেলে। বলেছিলাম ৬০ দিন রাস্তায় থাকব, মানুষের জনতম সংগ্রহ করে আসব। তাই করেছি। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, ৪৫৭৮ কিমি কখনও গাড়িতে, কখনও হেঁটে, রাস্তায় নেমে মানুষের মত জোগাড় করেছি। অনেকে তো বিদ্রুপ করেছিলেন।
- পদ্মফুলের গড় হয়ে গিয়েছে নদিয়া। পদ্মফুল থাকবে গোয়াল ঘরে, তৃণমূল থাকবে রানাঘাটের ঘরে ঘরে।
- ওরাও তো চাকরি দিয়েছে। চাকরি কাকে দিয়েছে, বঙ্কিম ঘোষের ছেলের বউকে। আমাদের যদি নেতা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলে সিবিআই-ইডি দিয়ে ধরো, জেলে ঢোকাও। তোমরা চোরেদের বড় বড় পদ দিয়ে পুরস্কৃত কর। সব চোর বিজেপিতে।
- ২৫ মাসে ২৬টা সিবিআই অর্ডার দিয়েছে। আমাকে কত নোটিস, কী ভাবছে আমরা বেইমান? আমাদের গলা কেটে দিলেও জয় বাংলা বেরোবে।
- আমাদের সঙ্গে কেউ নেই। ইডি নেই, সিবিআই নেই, বিচার ব্যবস্থার একাংশ নেই, মিডিয়া নেই, আছে হাজার হাজার মানুষ।
- বিরোধীদের খুব মজা হচ্ছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েছে। আমি হাইকোর্টকে ধন্যবাদ জানাই, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েছে। আমি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কৃতজ্ঞ। এক একটা বুথের বাইরে ৫ জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন করুন। একুশ সালে যা ফল হয়েছে… আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, একুশ সালে তৃণমূল ভোট পেয়েছিল ৪৮ শতাংশ, আর বিজেপি পেয়েছিল ৩৮ শতাংশ। এবার ব্যবধান ১৫ শতাংশ হবে। তৃণমূলের ভোট বাড়বে। বিজেপির কমবে। আমি এই কথা এই মাটিতে দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছি। ১০ জুলাই ভোটের ফল বেরোবে, তখন দেখে নেবেন। তৃণমূল বিশুদ্ধ লোহা। যত পেটাবেন, তত বাড়বে।
- আমি বলেছিলাম, নির্বাচনে একশো শতাংশ মনোনয়ন হবে। বলুন হয়েছে কি হয়নি। কোথাও সিপিএম কংগ্রেস জোট হয়েছে, কোথাও সিপিএম কংগ্রেস বিজেপির মধ্যে জোট হয়েছে। তিনটেই হচ্ছে আপদ বিপদ। জোড়াফুল নিরাপদ।
- মানুষ যদি চায়, আগামী দিন কেউ রেয়াত পাবেন না। বিজেপি নেতারা ন বছরে যা দুর্নীতি করেছে…বিচারব্যবস্থা যদি নিরপেক্ষ হয়, আর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে শাস্তি হবে। নেতাদের মুখ দেখবেন ফুলে গিয়েছে।
- আমার তিন বছরের ছেলে তাকে আক্রমণ করছেন এই দেশের প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে আটকে দিচ্ছে আমার স্ত্রীকে। আমার ৯ বছরের মেয়ে, আমার তিন বছরের ছেলেকে। কারণ অভিষেক আত্মসমর্পণ করেনি। প্রধানমন্ত্রী আমার থেকে বয়সে অনেক বড়। আমি শ্রদ্ধা জানিয়েই বলি, আপনার যা জেদ, তার থেকে ১০ গুণ জেদ আমার। আপনার জেদ আমাকে আত্মসমর্পণ করাবেন। আর তৃণমূল যাতে বশ্যতা স্বীকার করে। আমার জেদ দিল্লির বুক থেকে ১০০ দিনের টাকা ছিনিয়ে আনব।