Asansol Coalmine Collapse: ‘তৃণমূলের লোক বলেছিল গোপনে লাশ পুড়িয়ে ফেলতে’, খোলামুখ খনিতে আদৌ কত মৃত্যু?

Chandra Shekhar Chatterjee | Edited By: শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী

Oct 16, 2023 | 10:41 AM

Asansol Coalmine Collapse: ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, "আমি সারারাত ধরে জেগে সাতটি দেহ উদ্ধার করলাম। কিন্তু সরকারিভাবে মাত্র তিনটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। ৭ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হচ্ছে না। আমার প্রশ্ন ময়নাতদন্ত না করে বাকি চারটি দেহ দাহ করে দেওয়া হল কেন?"

Asansol Coalmine Collapse: তৃণমূলের লোক বলেছিল গোপনে লাশ পুড়িয়ে ফেলতে, খোলামুখ খনিতে আদৌ কত মৃত্যু?
মৃতের পরিবারের সদস্য
Image Credit source: TV9 Bangla

Follow Us

আসানসোল: রানিগঞ্জের খোলামুখ খনিতে ধসে চাপা পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় উঠে এল  চাঞ্চল্যকর তথ্য। সরকারিভাবে জানানো হয়, ধসে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতো, তাঁদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এবার এলাকার আরও চারটি পরিবারের সদস্যরা মুখ খুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, তাঁদেরও ঘরের লোকের মৃত্যু হয়েছে ধসে। কিন্তু তৃণমূলের লোক দেহ গোপনে দাহ করে দিতে বলেছিলেন। তাঁরা সেটাই করেন। তাই এখন আর তাঁরা ক্ষতিপূরণও পাচ্ছেন না। রানিগঞ্জের নারায়ণকুড়ি খোলামুখ খনিতে ধসে চাপা পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় এই অভিযোগ সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।

চারটি পরিবার দাবি তুলেছেন, তাঁদেরও বাড়ির লোকজন মারা গিয়েছেন কয়লা চাল ধসে। ঘটনার পর যারা মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন, তাঁরাই এবার মুখ খুলছেন। গোপনে দেহগুলি যাঁরা শ্মশানে দাহ করেছিলেন, এবার তাঁরাই সামনে এসে ক্ষতিপূরণ ও চাকরির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।

গত বুধবার বিকালে নারায়ণকুড়ি খোলামুখ কয়লা খনির ভেতর অবৈধভাবে কয়লা কাটতে গিয়ে মৃত্যু হয় বেশ কয়েকজনের। মূলত নিউ এগারা, বল্লভপুর এলাকার মানুষজন ওই খনিতে ঢুকে কয়লা কাটে বা কয়লা তুলে নিয়ে যায়। কয়লার চাল ধসে মৃত্যু হয় জামুড়িয়ার পরিহারপুরের দীনেশ রুইদাস (৩৮), রানিগঞ্জের বল্লভপুরের সমীর বাউড়ি (১৭), রানিগঞ্জ নিউ এগারার বাসিন্দা সুরজিৎ সেনের (২১)। এই তিনটি মৃতদেহ বৃহস্পতিবার জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়। সেই মতো সরকারিভাবে এই তিন জনের মৃত্যুর কথা সামনে আসে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষতিপূরণ ঘোষণার পরে মৃত উজ্জ্বল গড়াইয়ের দাদা কাজল গড়াই দাবি করছেন, তাঁর ভাইয়েও মৃত্যু হয়েছে ধসে চাপা পড়ে। কিন্তু তাঁরা ভীত ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের নেতারা বলেছিলেন তাড়াতাড়ি দাহ করে দিতে। তাই গোপনে মৃতদেহ দাহ করে দিয়েছেন তাঁরা। তাঁর বক্তব্য, “রাত বারোটার সময়ে লাশটা পাওয়ার পর, তৃণমূলের পার্টির থেকে আমাদের ফোন করা হয়েছিল। বলেছিল, ময়নাতদন্তের আগেই লাশটাকে জ্বালিয়ে দেওয়া হোক।” মৃত উজ্জ্বল গড়াইয়ের তিনটি শিশু সন্তান রয়েছে। তাই ক্ষতিপূরণ না পেলে পথে বসতে হবে বলে দাবি পরিবারের।

নিউএগারার আরেক বাসিন্দা অনিল কোড়া। তাঁর পরিবারের লোকজনও দাবি তুলেছেন, অনিলেরও ধসে চাপা পড়ে মৃত্য়ু হয়েছে। অনিলের দাদা সুনীল কোড়া বলেন, “দেহটি ছিন্নভিন্ন অবস্থায় আমরা পাই। আমাদের মাথা কাজ করছিল না। আমরা ভয় পেয়ে গেছিলাম। আমরা তাই রাতারাতি দেহটি দাহ করে দিয়েছি। এখন শুনছি ক্ষতিপূরণ পাবে বেশ কয়েকজন। ওই একই ঘটনায় তো আমাদের ভাইয়েরও মৃত্যু হয়েছে। তাহলে কেন ক্ষতিপূরণ পাবো না? আমরাও দাবি জানাচ্ছি ক্ষতিপূরণের।”

মৃত সুরজিৎ সেনের পরিবারের দাবি, সুরজিৎ মৃৎশিল্পী ছিলেন। সুরজিতের বাবা সমীর সেন বলেন, “আমার ছেলে কয়লা চোর ছিল না। একজন মৃৎশিল্পী ছিল। সে কয়লা আনতে গিয়েছিল। আমাদের বাড়ির সামনে এত বড় খোলামুখ খনি। এখানে কোনও চাকরি-বাকরি নেই। আমাদের ঘরবাড়ি ফেটে যাচ্ছে ডিনামাইট বিস্ফোরণে। গোটা গ্রামটাই ধ্বংসের পথে। আমরা কোথায় যাব? আমার ছেলেটাই চলে গেল ক্ষতিপূরণ নিয়ে কী হবে?”

মালতি বাউড়ি নামে আরও এক স্থানীয় বাসিন্দা দাবি করেছেন তাঁর ভাই সমীর বাউড়ির মৃত্যু হয়েছে ধসে চাপা পড়ে। সমীরের বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। একটা হাত নেই। সংসারে কাজে যেন রোজগার হয় তার জন্যই তিনি গিয়েছিলেন কয়লা কুড়োতে।

এপ্রসঙ্গে, রানিগঞ্জের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “১০০ দিনের টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মানুষের হাতে কাজ নেই। ইসিএল খোলামুখ খনিগুলোকে অসুরক্ষিত ভাবে খোলা ছেড়ে দিয়েছে। তাই ইসিএলকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে মৃতদের পরিবারকে।” আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “আমি সারারাত ধরে জেগে সাতটি দেহ উদ্ধার করলাম। কিন্তু সরকারিভাবে মাত্র তিনটি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। ৭ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হচ্ছে না। আমার প্রশ্ন ময়নাতদন্ত না করে বাকি চারটি দেহ দাহ করে দেওয়া হল কেন? পুলিশ প্রশাসন কেন ওই দেহগুলি হাসপাতালে না পাঠিয়ে পরিবারের হাতে তুলে দিল?”

অগ্নিমিত্রা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যাঁরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না, সেই সমস্ত পরিবার নিয়ে তিনি রাস্তায় এবার আন্দোলনে নামবেন।

অন্যদিকে রাজ্যের শ্রম ও আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “রাজ্য সরকার ও বিশেষ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বাংলার সব মানুষের কথা ভাবেন, এটা প্রমাণিত। গোটা বিষয়টি রাজ্য সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখছে।”

Next Article