Asansol Village: বছরের এক রাতই মানুষ থাকে, তারপর শুনশান… বাংলার সেই ‘ভূত গ্রাম’ নিয়ে এবার নতুন ভাবনা

TV9 Bangla Digital | Edited By: তন্নিষ্ঠা ভাণ্ডারী

Jun 04, 2022 | 9:15 AM

Asansol Village: পরিত্যক্ত এই গ্রামে মানুষের বাস নেই বললেই চলে। শুধু বছরে একবার পুজো উপলক্ষে মানুষ আসে, আবার ফিরে যায়।

Asansol Village: বছরের এক রাতই মানুষ থাকে, তারপর শুনশান... বাংলার সেই ভূত গ্রাম নিয়ে এবার নতুন ভাবনা
এই সেই পরিত্যক্ত বেনাগ্রাম

Follow Us

আসানসোল: রাজস্থানের কুলধারা গ্রামের কথা অনেকেই শুনেছেন। একসময়ের সমৃদ্ধ এই গ্রাম কোনও এক অজানা কারণে জনমানবশূন্য হয়ে যায় বহু বছর আগে। বর্তমানে পর্যটকেরা রহস্যের গন্ধ পেতে সেই গ্রামে যান। শুধু রাজস্থান নয়, দেশের অনেক জায়গাতেই রয়েছে এমন রহস্যের ছায়া। কী হয়েছিল? কেন হয়েছিল? তার কার্য-কারণ খুঁজতে যায়নি কেউ। কোনও এক অজানা ভয়েই সে সব জায়গায় নেই মানুষের বাস। বছরের পর বছর এমনভাবে পড়ে থাকার স্বাবাবিকভাবেই একটা গা ছমছমে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাংলাতেও রয়েছে তেমনই এক ভূতুড়ে গ্রাম। আসানসোলের সেই বেনাগ্রামকে নিয়েই এবার শুরু হল পর্যটনের ভাবনা।

বছর ২০ আগে আসানসোলের কুলটির বেনাগ্রাম জনশূন্য হয়ে যায়। রটে গিয়েছিল, ভূতের ভয়ে নাকি গাঁ উজাড় হয়েছে বেনার। তাই আর কেউ ফিরে আসেনি সেই গ্রামে। ভিটেমাটি সবই পড়ে রয়েছে, শুধু মানুষের দেখা মেলে না দূর-দূরান্তেও। স্থানীয়দের কেউ কেউ অবশ্য ভূতের কথা মানেন না। তাঁদের দাবি, দুস্কৃতীদের দৌরাত্ম্য আর অনুন্নয়নের ঠেলাই তাঁদের গ্রাম ছাড়া করেছে। জল-বিদ্যুৎ কিছুই নাকি ছিল না সেই গ্রামে। এবার সেই গ্রাম নিয়ে শুরু হয়েছে নয়া পরিকল্পনা। ডার্ক ট্যুরিসিম বা হরর থিম পার্ক তৈরি করা যেতে পারে কুলটির বেনাগ্রামকে। এমন পরিকল্পনার কথাই জানিয়েছেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ডক্টর অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্য়ায়। আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে সঙ্গে নিয়ে তাই রাতের অন্ধকারে সেই গ্রাম ঘুরে দেখলেন অনির্বাণ।

২০১৫ সালে জিতেন্দ্র তিওয়ারি মেয়র থাকাকালীন ওই গ্রামে পাকা রাস্তা তৈরি করে দেন। বিদ্যুতের খুঁটিও বসিয়ে দেন। কিন্তু, সেই তিমিরেই থেকে যায় বেনাগ্রাম। গ্রামের মানুষ আর ভিটে মাটিতে ফিরে আসেননি কোনও দিন। ফলে রহস্য অজানাই থেকে যায় বেনাগ্রামকে নিয়ে। শুধু বছরে একবার লক্ষ্মী পুজোর সময় বেনাগ্রামের মানুষ একরাতের জন্য ফিরে আসেন গ্রামে। পুজো শেষ করে ফিরে যান নিজের নিজের জায়গায়। সারা বছর নির্জন পড়ে থাকে বেনাগ্রাম। ভাঙা পোড়োবাড়ি। ভাঙা লক্ষ্মী মন্দির। জঙ্গলে ঘেরা বেনাগ্রামে মাঝে মাঝেই দেখা যায় দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন। কেউ ভূত দেখতে, কেউ বা রহস্য রোমাঞ্চের খোঁজে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিও দেখা যায়। ফলে বেনাকে কেন্দ্র করে রহস্য ও রোমাঞ্চকেই এবার উন্নয়ন হিসেবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা থেকেই প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি ভূতগ্রামে নিয়ে গেলেন অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্য়ায়কে।

জিতেন্দ্র তেওয়ারির দাবি, এই গ্রাম রহস্যজনক। বাম আমলে গ্রামের মানুষ ভিটে মাটি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে মেয়র হওয়ার পর তিনি ওই গ্রামের জন্য অনেক কিছুই করেছেন, অথচ গ্রামের মানুষ গ্রামে ফিরে আসেননি। গ্রামের মানুষ স্বীকার না করলেও অজানা আতঙ্ক রয়েই গিয়েছে।
অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যজগতে ভূত রোমাঞ্চ একটা মৌলিক বিষয়। আমরা প্রত্যেকে ছোট থেকে সেরা ভূতের গল্প পড়ে বড় হয়েছি। সেখানে দাঁড়িয়ে এই নির্জন গ্রামটিকে ভৌতিক থিম পার্ক করা যেতে পারে। আমরা রাজ্যকে এরকম পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আবেদন করব। গ্রামটিকে যাতে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়।’

ঘরছাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, যে কোনওভাবে তাঁরা উন্নয়নের পক্ষে। গ্রামকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে আপত্তির কিছু নেই। গ্রামবাসীদের আয় হবে। স্থানীয়দের ব্যবসাও বাড়বে বলে মনে করেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে সবার মত এক হলে তবেই এই গ্রামে পর্যটন সম্ভব বলে মনে করছেন তাঁরা।

কী এই ডার্ক ট্যুরিজম?

রোম, প্যারিস বা ওয়াশিংটনে এমন পর্যটনের চল রয়েছে। গুজরাটের ভূজ, আন্দামানের সেলুলার জেল, সুরাটের ভিউমার্ট বিচ, পুনের সানিয়ারওয়ার্দাতেও ডার্ক টুরিজম রয়েছে। এ রাজ্যের কার্শিয়াং এর দ্য হিলে রয়েছে ডার্ক টুরিজম। ভয়, রোমাঞ্চ, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মত ঘটনা বা কালো ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেই তা ডার্ক টুরিজমের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। বেনাগ্রামকে নিয়েও চলছে সেরকমই পরিকল্পনা।

Next Article