আসানসোল : তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ তুললেন সিবিআই আইনজীবী। দশ দিনের সিবিআই হেফাজত শেষে এদিন অনুব্রত মণ্ডলকে আবার পেশ করা হয়েছিল আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে। সেখানে অনুব্রত মণ্ডলকে আবার সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানান সিবিআই আইনজীবী। অন্যদিকে, এর বিরোধিতা করেন অনুব্রতর আইনজীবী। এদিনে আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের আবেদন জমা পড়ে। মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবীরা। আদালতে মেডিক্যাল ডকুমেন্টসও দেওয়া হয় অনুব্রতর আইনজীবীদের তরফে।
এদিকে অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের নামে যে ফিক্সড ডিপোজিটের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, আদালতে সেগুলিরও ব্যাখ্যা দেন তাঁর আইনজীবী সন্দীপন গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানান, কিছু ফিক্সড ডিপোজিট পাওয়া গিয়েছে। সবটাই স্ত্রীর মৃত্যুর পর লাইফ ইনসিউরেন্স থেকে পাওয়া টাকা। এর পাশাপাশি যে রাইস মিলের কথা বলা হচ্ছে, সেটা শ্বশুর দিয়েছে বলে জানান অনুব্রতর আইনজীবী। এর পাশাপাশি অকশন ম্যানিপুলেশন, পশুর হাট থেকে কিনে সেগুলি পাচার করার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলিও যথাযথ নয় বলে দাবি অনুব্রতর আইনজীবীর। উল্লেখ্য, অনুব্রত মণ্ডলকে সিবিআই-এর তরফে যে চারদিনের হেফাজতে চাওয়া হচ্ছে, তারও কোনও যথাযথ কারণ রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনুব্রতর আইনজীবী। বলেন, “সিবিআই বলেছে, উনি সহযোগিতা করছেন না। বাকি চার দিন পেলে সহযোগিতা করবেন কী করে বুঝলেন?” শনিবার আসানসোলে সিবিআই বিশেষ আদালতে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতির আইনজীবী বলেন, “সিবিআই বলছে উনি সহযোগিতা করছেন না। ওনার কন্যা সহযোগিতা করেছেন না। এটাই কি হেফাজতে নেওয়ার কারণ হতে পারে?”
তিনি আরও বলেন, “সিবিআই বলছে ওনাকে বারংবার ডাকা হলেও, হাজিরা দেননি। কিন্তু উনি ইচ্ছা করে হাজিরা দেননি এমন নয়, শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকার জন্য উপস্থিচ হতে পারেননি।” অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবীর সাফাই শুনে বিচারক পাল্টা প্রশ্ন করেন, এই রকম কো-ইন্সিডেন্স বারং বার কীভাবে হতে পারে? জবাবে অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী বলেন, “এটি কোনও কো-ইন্সিডেন্স নয়। ২০১১ সাল থেকেই উনি চিকিৎসার মধ্যে আছেন। আমাদের কাছে নথি আছে সব। দুই সপ্তাহের জন্য বেড রেস্ট নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।” তাঁর আইনজীবীর বক্তব্য, অনুব্রতর শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকার জন্য তাঁর সুবিধা মতো জায়গায় বাড়িতে বা কোথাও গিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারত তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু সিবিআই ৮ ফেব্রুয়ারি নোটিস দেওয়ার পর অসুস্থতার জন্য যেতে পারেননি। সেদিনই আবার সিবিআই নোটিস দেয় ১০ তারিখ যাওয়ার জন্য। অনুব্রতর আইনজীবীর বক্তব্য, তিনি তো বাড়ি থেকে পালিয়ে যাননি। তিনি পলাতক ছিলেন না।
অনুব্রতর আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিচারক আবারও প্রশ্ন করেন, “উনি কলকাতায় কতবার গিয়েছিলেন?” জবাবে তৃণমূল নেতার আইনজীবী জানান, শারীরিক চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন এক বার। পাশাপাশি অনুব্রত মণ্ডলের শরীর কেমন আছে, তাও জানতে চান। অনুব্রতকে প্রশ্ন করেন, “স্বাস্থ্য ঠিক আছে আপনার?” অনুব্রত বলেন, “শরীর আমার বরাবরই খারাপ। কালও জ্বর ছিল। কাশি আছে।” বিচারক ফের প্রশ্ন করেন, “চিকিৎসকরা আপনাকে দেখছেন তো? চেক আপ করছেন তো?” জবাবে অনুব্রত বলেন, “এসএসকেএম-এর ওষুধ খাচ্ছি।” বিচারক তাঁকে পরামর্শ দেন, “কোনও অসুবিধা হলে ডাক্তারদের বলবেন।”
তবে সিবিআই আইনজীবীর পাল্টা বক্তব্য, তদন্তে কোনওভাবেই সহযোগিতা করছেন না অনুব্রত মণ্ডল। তিনি তদন্ত প্রক্রিয়াকে নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও দাবি সিবিআই আইনজীবীর। সিবিআই আইনজীবী বলেন, “সাইগল হোসেন ছিল অন্যতম মিডিয়েটর। টাকা কালেকশন করত সাইগল। সাইগল এনামূলের সঙ্গে ওনার হয়েই যোগাযোগ রাখত। বিভিন্ন সময়ে গরু কেনাবেচার ক্ষেত্রে ব্যাকডেটেড নথি দেখানো হয়েছে। শুরু থেকে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬০-এর আওতায় নোটিস দেওয়া হয়েছিল। এর আগে বহুবার নোটিস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে তিনি সহযোগিতা করেননি। উনি সাধারণ অভিযুক্ত নন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ আছে।”
সিবিআই আইনজীবী আরও দাবি করেন, সাইগল মিডিয়েটর-এর কাজ করত। বডি গার্ডের মাধ্যমে এনামূল হকের থেকে টাকা নেওয়া হত। এটা কোনও ‘সিঙ্গেল ম্যান বিজনেস’ নয়, একটা চেন। এটা পিছনে ষড়যন্ত্র আছে। এনার (অনুব্রতর) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এনাকে সিবিআই হেফাজতে নেওয়া দরকার। বহু নতুন তথ্য উঠে এসেছে। সেগুলি ক্রস চেক করার জন্য হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন।