পশ্চিম বর্ধমান: কয়লা-কাণ্ডে (Coal Scam) অনুপ মাজি ওরফে লালার ‘ছায়াসঙ্গী’ আসানসোলের জয়দেব মণ্ডলকে আগেই ৪ দিন হেফাজতে নিয়েছিল সিবিআই। সেই মেয়াদ শেষ হতে শুক্রবার ফের তাঁকে আদালতে পেশ করা হয়। এদিন, জয়দেবকে আরও তিনদিন সিবিআই (CBI) হেফাজতে থাকতেই নির্দেশ দেয় আদালত।
সিবিআই সূত্রে খবর, বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সিবিআইয়ের আইনজীবীর পক্ষ থেকে জয়দেবকে আরও তিনদিনের হেফাজতচাওয়ার আর্জি জানানো হয়। যেহেতু, কয়লা-দুর্নীতি একটি দীর্ঘমেয়াদি সক্রিয় অপরাধ চক্র ফলে ধৃতকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। পাল্টা জয়দেবের পক্ষের আইনজীবীর দাবি, জয়দেবকে জেরা করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা কিছুই পাননি। তাছাড়া জয়দেবও অসুস্থ। তাই তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। যদিও সেই আবেদন নাকচ করে দেন বিচারক। এই মামলায় জয়দেব ছাড়াও ধৃত নীরদ মণ্ডল, গুরুপদ মাজি ও নারায়ণ নন্দাকে আগামী ৪ অক্টোবর আবার আসানসোলের সিবিআই আদালতে তোলা হবে।
ধৃত চারজন লালার কয়লা ব্যবসার সিন্ডিকেটের দেখাশোনা করত। এঁদের হাত ঘুরেই একাধিক প্রভাবশালীর কাছে পৌঁছত ‘কালো’ টাকা। প্রায় এক বছর হতে চলল কয়লাকাণ্ডের তদন্তভার হাতে তুলে নিয়েছে সিবিআই। তবে এতদিন ঢেলে তদন্ত করলেও গ্রেফতার হয়নি কেউ। এই প্রথম কয়লাকাণ্ডে গ্রেফতারি। তাও একই সঙ্গে চারজন। অভিযোগ, প্রত্যেকে লালার সিন্ডিকেটে যুক্ত। অর্থাৎ, কয়লা কোথায় পাচার করা হবে। কত টাকায় রফা হবে, কে কী ভাবে কয়লার টাকা দেবেন বা নেবেন সবটাই নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ধৃতদের। সিন্ডিকেটের একেবারে শীর্ষ পদে ছিলেন এই জয়দেব, নীরদ, নারায়ণ, গুরুপদ।
অভিযোগ, শুধু সিন্ডিকেটই নয়, লালার আরও একাধিক বেআইনি ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন চারজন। মূলত, এই ব্যবসায় কয়লা পাচারের টাকা খাটানো হতো বলে অভিযোগ। সেই ব্যবসায় ডিরেক্টর পদে নাম রয়েছে চারজনের। সিবিআই এর আগেও বহুবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তাঁদের। কোনও বারই সন্তোষজনক জবাব পায়নি।
বেশ কিছু প্রশ্নের জবাবে মুখই খোলেননি এই চার অভিযুক্ত। এরপরই তাঁদের গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ধৃতদের আসানসোল আদালতে তোলা হবে। সিবিআইয়ের তরফে ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আর্জিও জানানো হবে বলে সূত্রের খবর। এই চারজনকে জেরা করে অনুপ মাজি ও তাঁর কয়লার কারবার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
কারণ, সিবিআই সূত্রে খবর কলকাতায় কয়লা-মাফিয়াদের সাম্রাজ্য বিস্তার এবং কোনও কোনও হেভিওয়েটের কাছে টাকা যেত সে তথ্য এই চারজনের কাছে রয়েছে। ফলে এই গ্রেফতারি যে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য।
গত নভেম্বরে কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তে মামলা দায়ের করে সিবিআই। দফায় দফায় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালান তদন্তকারীরা। তদন্তে নেমে চোখ কপালে ওঠে তাঁদের। হাতে আসে অনুপ মাজি ওরফে লালা নামে এক মাঝ বয়সী লোকের নাম, কয়লা পাচার করে যিনি কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। তাঁকে খুঁজতে পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ার বাড়িতে প্রথম হানা দেয় সিবিআই। একইসঙ্গে কলকাতায় তাঁর বাড়ি ও অফিসেও যান তদন্তকারীরা। যদিও লালার দেখা তাঁরা পাননি। তবে লালার জাল যে বহু দূর ছড়িয়েছে, তা বুঝতে পারে তদন্তকারী সংস্থা।
আরও পড়ুন: Krishna Kalyani Resigns From BJP: দল ছাড়লেন রায়গঞ্জের বিজেপি বিধায়ক কৃষ্ণকল্যাণী