Asansol: ৩৫০ কোটি টাকা তছরুপ, শুনেই আসানসোল চিটফান্ড-কাণ্ডে ধৃতের আইনজীবী বললেন…
Asansol Chitfund case: আসানসোলে চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে মূল অভিযুক্ত তহসিন আহমেদকে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ শনিবার রাতে গ্রেফতার করে। তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের নেতা শাকিল আহমেদের ছেলে তহসিনের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৩৫০ কোটি আর্থিক তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, চিটফান্ডের কায়দায় প্রায় তিন হাজার লগ্নকারীর কাছ থেকে এই পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আসানসোল: জামিন পেলেন না আসানসোল চিটফান্ড কাণ্ডে ধৃত তহসিন আহমেদ। শনিবার রাতে গ্রেফতারের পর রবিবার আসানসোল আদালতে তোলা হয় জেলা তৃণমূল নেতার পুত্র তহসিনকে। এদিন অভিযুক্তর আইনজীবী জামিনের আবেদন করলেও বিচারক তা খারিজ করে দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪ দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন হলেও ধৃতকে বিচারক ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
এদিন আদালতে ধৃতের আইনজীবী সৈয়দ রেহান বলেন, “সাড়ে তিনশো কোটি টাকার আর্থিক তছরুপের ঘটনার কথা আমার জানা নেই। ৫৪ লাখ টাকার আর্থিক তছরুপের একটিমাত্র অভিযোগ (এফআইআর) দায়ের হয়েছে থানায়। তারই প্রেক্ষিতে গ্রেফতারের ঘটনা।” তাঁর দাবি, এফআইআরে ওই লগ্নিকারীকে তহসিন ১০ লাখ টাকা অনরেকর্ড ফেরত দিয়েছেন। ক্যাশ ফেরত দিয়েছেন আরও ১৯ লাখ। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ ফেরত পেয়ে গিয়েছেন। আদালতের কাছে সেই ডকুমেন্ট জমা করা হয়েছে। তহসিন ও তাঁর কোম্পানি প্রপার ট্রেডার। রেজিস্টার্ড। লগ্নিকারীদের টাকা শেয়ার ট্রেডিংয়ে লাগানো হয়েছিল। শেয়ার মার্কেটে ধস নামায় সাময়িক সমস্যা হয়।
উল্লেখ্য আসানসোলে চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে মূল অভিযুক্ত তহসিন আহমেদকে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ শনিবার রাতে গ্রেফতার করে। তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের নেতা শাকিল আহমেদের ছেলে তহসিনের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৩৫০ কোটি আর্থিক তছরুপের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, চিটফান্ডের কায়দায় প্রায় তিন হাজার লগ্নকারীর কাছ থেকে এই পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ধৃতের কাছ থেকে ২৫০ গ্রামের মতো সোনা উদ্ধার হয়। যার বাজারমূল্য ৩০ লাখ টাকার মতো। পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত তহসিন পালানোর চেষ্টা করছিলেন। ঝাড়খণ্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময় ফাঁদ পেতে তাঁকে পাকড়াও করা হয়। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের চন্দ্রচূড় মন্দিরের মোড়ের কাছে তহসিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আসানসোলের রেলপাড়ার জাহাঙ্গির মহল্লার একাধিক বাসিন্দা তহসিনের বিরুদ্ধে তাঁদের সঞ্চয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, বেশি রিটার্নের লোভ দেখিয়ে প্রতারণা করেছেন তহসিন। মাসে মাসে মোটা অঙ্কের সুদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রথমে দিকে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হলেও পরে অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর টাকা ফেরতের দাবিতে গত বুধবার তহসিনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ ও পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বিনিয়োগকারীদের একাংশ।
অভিযুক্তর আইনজীবী সৈয়দ রেহান এই দিন আদালতে দাবি করেন, যে গয়নাগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, সেগুলো তাঁর মক্কেলের নিজের গয়না। সেই গয়না বিক্রি করে লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ায় উদ্দেশ্য ছিল। পালিয়ে যাওয়া নয়। সিআরপিসি ৪১-এর নোটিস দেওয়া হয়নি। থানায় ডেকে পাঠানো হয়নি। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। গ্রেফতারি আইন সম্মত হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে।
তবে তৃণমূল মাইনরিটি সেলের জেলা সহ-সভাপতির ছেলে তহসিন আহমেদ গ্রেফতার হওয়ার পরেও সরগরম রাজনীতি। বিরোধীদের কটাক্ষ, আসানসোলের চিটফান্ডের কায়দায় এই প্রতারণা চক্র বহুদিনের। পুলিশ সব জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি। এখন লোক দেখাতে গ্রেফতার করেছে তহসিন আহমেদকে। তহসিনের মাথার উপরে অনেক বড় বড় তৃণমূল নেতা, মন্ত্রীরা রয়েছেন। চুনোপুটি নয়, বড় মাথাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছে বিরোধীরা। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা বলেন, “তৃণমূল নেতার ছেলেকে ধরে কি পরিস্থিতি ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে প্রশাসন? এখানকার তৃণমূল নেতারা কি এই চুরির কথা জানতেন না? যে টাকা চুরি হয়েছে, সেই টাকা ফেরত দিতে হবে। পুলিশকে দিয়ে এই নাটকের দরকার নেই। পয়সা ফেরত না দিলে প্রতিটি থানা আমরা ঘেরাও করব।”
চিটফান্ড কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায় এড়িয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, তহসিনের বাবা শাকিল আহমেদ এখন দলের কোনও পদে নেই। যদিও জেলা তৃণমূলের এই দাবিকে মানতে নারাজ বিরোধীরা।
