আসানসোল : শুধু ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বা আত্মীয় নয় অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) নিজের বাড়ির পরিচারকের অ্যাকাউন্টকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা ব্যাঙ্ক লেনদেনে করেছেন। গরু পাচারের (Cow Smuggling) কালো টাকা সাদা করতে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছাড়াও অনুব্রত ব্যবহার করেছেন বাড়ির কাজের লোকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল সিবিআইয়ের (CBI) দেওয়া অনুব্রতর বিরুদ্ধে চার্জশিটে।
সূত্রের খবর, পরিচারকের নামে দামি গাড়িও কিনেছেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই। চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে মুনের নাম। চার্জশিটে যাকে বেতনভুক্ত সার্ভেন্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বজ্যোতি ওরফে মুন ২০১১ সাল থেকেই অনুব্রত বাড়ির পরিচারকের কাজ করছেন। প্রথমে তার বেতন পাঁচ হাজার থাকলেও এখন তা বেড়ে ২০ হাজার হয়েছে। নগদেই সেই টাকা পেতেন তিনি। এরপরই সিবিআইয়ের দাবি, অন্য কোনও রোজগার না থাকায় এই পরিচারকের অ্যাকাউন্টেই ৫১ বারে ৪৫ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬০৪ টাকা নগদ জমা হয়েছে। পাশাপাশি ৮ বারের ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারে সেখানে জমা পড়েছে ৬২ লক্ষ ৭৭ হাজার ৩৪৫ টাকা।
চর্চায় চার্জশিটের ১১ নম্বর পাতা
সূত্রের খবর, সিবিআই চার্জশিটে দাবি করেছে, বিশ্বজ্যোতিবাবু তাঁদের জানিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল ও সায়গল হোসেনের নির্দেশেই তাঁর অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে। ২০১৯ সালের তাঁর নামে দামি গাড়ি কেনা হলেও তা পরিচারকের নজরে ছিল না বলেই সিবিআইয়ের দাবি। অনুব্রত বাড়িতে থাকা আরেক কর্মচারি বিদ্যুৎবরণ গায়েনের বিপুল আর্থিক লেনদেনও চার্জশিটে তুলে ধরা হয়েছে। তেমনই এক বছর আগেই অনুব্রতর বাড়ির কর্মচারির কাজ ছেড়ে দেওয়া জ্যোতির্ময় দাসের কথাও চার্জশিটে তুলে ধরা হয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, তিনিও বিপুল টাকা লেনদেনের বিষয়টি জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটের ১১ নম্বর পাতায় উল্লেখ রয়েছে বাড়ির চাকরের অ্যাকাউন্টে লেনদেনের কথা।
বোলপুরের সোনাঝুড়ির পর্যটন ব্যবসায়ীদের অ্যাকাউন্টকেও ব্যবহার
অভিযোগ কালো টাকা সাদা করতে বোলপুরের সোনাঝুড়ির পর্যটন ব্যবসায়ীদের অ্যাকাউন্টকেও ব্যবহার করতেন অনুব্রত মণ্ডল। চার্জশিটে তেমনই তথ্য তুলে ধরেছে সিবিআই। ২০১৮ সালের শেষ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অনুব্রত মণ্ডল বিভিন্ন সময়ে মোট ৫ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা সুব্রত বিশ্বাসকে দেন। এই সুব্রত বিশ্বাসকে ‘এক্স-ব্যাঙ্কার’ পরিচয় দিয়েছে সিবিআই। সিবিআইয়ের দাবি, সেই অর্থ ওভার ড্রাফটের মাধ্যমে জনৈক সুব্রত মণ্ডলের অ্যাকাউন্টে ও সোনাঝুরি হোম স্ট্রে নামে থাকা একাধিক ব্যাঙ্কের কারেন্ট অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। সুব্রত বিশ্বাস সেই অর্থই আবার অনুব্রত মণ্ডলের পরিবারের সঙ্গে থাকা জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এভাবেই নগদ টাকা একাধিক হাত ঘুরিয়ে স্বচ্ছ করেছিলেন বীরভূম তৃণমূল জেলা সভাপতি, দাবি সিবিআইয়ের। অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ৩৫ পাতার চার্জশিটে তোলাবাজি, ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও বাড়ির কাজের লোকদের অ্যাকাউন্ট ব্যবাহ করে কালোটাকাকে সাদা করা, রাইসমিলের হাতবদল সহ নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।