আসানসোল: বিচারকের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল সিবিআই। ধৃত ইসিএল অধিকারিক নরেশ কুমার সাহা ও কয়লা কারবারি অশ্বিনী যাদবকে চারদিন নিজেদের হেফাজতে নিয়ে সোমবার সিবিআই আদালতে পেশ করে জেল হেফাজত চাইতেই বিরক্তি প্রকাশ করেন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। প্রশ্ন করেন, “ওঁদের জেলের ভেতর আটকে রাখতে চাইছেন কেন ? জেলে থাকলে কী সুবিধা ? বাইরে থাকলে কী অসুবিধা ? বুঝিয়ে বলুন।” বিচারকের প্রশ্নে সিবিআই আইনজীবী বলেন, “ওঁরা বাইরে থাকলে তদন্তে প্রভাবিত হতে পারে। অন্য অভিযুক্তদের সতর্ক করতে পারেন। সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন।”
বিচারকের পাল্টা প্রশ্ন করেন, “তাহলে বলতে চাইছেন, এতোদিন যাঁদেরকে আপনারা খুঁজে পাচ্ছেন না, বাইরে বেরিয়ে উনি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেবেন ? যতদিন না অন্য কেউ গ্রেফতার হচ্ছে, ততদিন ওঁরা জেলে আটকে থাকবেন?” বিচারকের এই প্রশ্নে কোনও উত্তর দিতে পারে না সিবিআই।
গত বৃহস্পতিবার ওই ইসিএল আধিকারিক ও কয়লা কারবারিকে বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। কয়লা তদন্তের চার্জশিট গঠনের ঠিক আগেই এই গ্রেফতারির যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন সিবিআই বিচারক। ওইদিন আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে বিচারকের প্রশ্নের মুখে পড়েছিল সিবিআই। এবার ধৃতদের হেফাজতে নিয়েও তদন্তে বিশেষ কোনও আপডেট না দেখতে পেয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি।
এদিন দেখা যায় সিবিআই ধৃতদের চারদিন হেফাজতের পর বিচারককে যে তথ্য পেশ করেছেন তাতে বিস্তর গন্ডগোল। যা দেখে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী মাথায় হাত দিয়ে বলে ওঠেন “মাই গুডনেস”। বিচারক বলেন, ” এটা আপনারা কী করে করেছেন ?” বিচারক বলেন, “আপনারা দুজনকে গ্রেফতার করলেন অভিযুক্ত হিসেবে। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে গেলেন আর আর তাদের স্টেটমেন্ট রেকর্ড করেছেন সাক্ষী হিসেবে।”
তিনি বলেন, “১৬১/৩ ধারা উল্লেখ করে আপনারা স্টেটমেন্ট রেকর্ড করেছেন। এটা কি সম্ভব আইনত ? ১৬১ ধারায় সাক্ষীদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এখানে আপনারা তাদেরকে গ্রেফতার করে এই ধরনের বয়ান রেকর্ড কীভাবে করলেন ?” সিবিআই আইনজীবী কার্যত ভ্যাবাচাকা খান। কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
বিচারক বলেন, “তাহলে কী ধরে নেব, এটা আপনাদের টাইপিং ভুল?” সে কথারও উত্তর দিতে পারেননি সিবিআই আইনজীবী।
অভিযুক্তদের আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ জামিনের আবেদন করেন। বিচারকের কাছে তিনি সওয়াল করেন, ২০২১ সাল থেকে ওই ইসিএল কর্তাকে যতবার নোটিস দিয়ে ডাকা হয়েছে, ততবার তিনি নিজাম প্যালেসে গিয়েছেন। তদন্তে সহযোগিতা করেছেন। অতীতে ওনার বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে কিন্তু কোনও কিছু সিজ হয়নি। এবার গ্রেফতার করা হয়েছে তাতেও কিছু সিজ হয়নি। এদিকে চারদিন হেফাজতে রাখার পরেও তদন্তের বিশেষ কোন আপডেট দিতে পারেনি সিবিআই। তাই জেলে রাখার কোনও যুক্তি নেই। তাঁর কথায়, “তদন্তে যদি উনি প্রভাবিত করতে পারতেন তাহলে এতদিন তো উনি বাইরেই ছিলেন। এমনকি সিবিআইয়ের পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়নি উনি অতীতে সাক্ষীদের প্রভাবিত করেছেন বা অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন।” শেষ পর্যন্ত জামিনের আবেদন খারিজ হয়। ধৃতদের দশ দিনের জেল হেফাজত হয়।