আসানসোল : আসানসোল পুরনিগমের চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ আনলেন কাউন্সিলর চৈতালি তিওয়ারি। তিনি তাঁর ফেসবুক পেজে ও টুইটারে একটি পোস্ট করেন সম্প্রতি। তাঁর দাবি, কোনও টেন্ডার না ডেকেই কাজ দেওয়া হয়েছে এক ব্যবসায়ীকে। পুরো বিষয়টি জানিয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন দফরের সচিব ও আসানসোলের মেয়রকে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, ‘রানিগঞ্জের ব্লু চিপ প্রজেক্ট প্রাইভেট লিমিটেডের ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বিনা টেন্ডারে এক ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। যার মাষ্টারমাইন্ড বর্তমান চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়।’ চৈতালি তিওয়ারির দাবি, যে কোনও কাজ করাতে গেলে টেন্ডার ডাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে তা না করে চেয়ারম্যান নিজের বন্ধুকে ওই বিপুল সম্পত্তি বিনা টেন্ডারে তুলে দিচ্ছেন, যা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে হাইকোর্টে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। একই অভিযোগ তুলেছেন পুরনিগমের কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন বরোচেয়ারম্যান গুলাম সরবরও। যদিও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়।
১৯৯৬ সালে যখন রানিগঞ্জ পৃথক মিউনিসিপ্যালটি বা রানিগঞ্জ পুরসভা ছিল সেই সময় কলকাতার ব্লু চিপ সংস্থার সঙ্গে মার্কেট তৈরি নিয়ে এক চুক্তি হয়। চুক্তিতে ছিল সংস্থাকে বিনামূল্যে জমি দেবে পুরসভা। বিল্ডিং নির্মাণে দেওয়া হবে ৪০ কোটি। পরিবর্তে মার্কেট থেকে ৪০ শতাংশ আয় পাবে পুরসভা। কিন্তু সমস্যা হয় রানিগঞ্জ পুরসভা যখন বৃহত্তর আসানসোল পুরনিগমের সঙ্গে মিশে যায়। তখন আসানসোল পুরনিগম ব্লুচিপকে জানিয়ে দেয় ওই ৪০ কোটি টাকা দেওয়ার ক্ষমতা তাঁদের নেই।
সেই সময় থেকে মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরির কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। চুক্তি ভঙ্গ নিয়ে ব্লু চিপ সংস্থা মামলা করে। যা নিয়ে এখনও ট্রাইবুনালে মামলা চলছে। এর জন্য আসানসোল পুরনিগমকে প্রতি শুনানিতে এ ৬০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। ট্রাইবুনালে বিষয়টি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি করে নিতে বলে।
পুরচেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, আদালতের নির্দেশ মতো বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা হচ্ছে। এর জন্য আসানসোল পুর কমিশনার, সচিব এবং আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, যে বিল্ডিং তৈরি করা হবে, আসানসোল পুরনিগম সেটির ৩০ শতাংশ নেবে। তিনি আরও জানান, এটি শুধু একটি প্রস্তাব যা বোর্ড মিটিংয়ে পাস করতে হবে। এতে তাঁর কোনও হাত নেই। ৫ তারিখ হবে সেই বোর্ড মিটিংয়ে। সেখানে এই প্রস্তাব পাস হলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, বোর্ড মিটিংয়ে এই খসড়া পাস হলেও এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে, এমন নয়। কারণ তারপর এই পাস হওয়া প্রস্তাব ট্রাইবুনালে পাঠাতে হবে। যদি বিচারকদের দ্বারা সেটি অনুমোদন পায়, তবেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
যদিও প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির স্ত্রী চৈতালি তিওয়ারি ও কংগ্রেস কাউন্সিলর গুলাম সরবর সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন পুরচেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, জিতেন্দ্র তিওয়ারি মেয়র পদ ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাওয়ার পর এক বছর বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ছিলেন অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। তখনই এই ঘটনা ঘটে।