আসানসোল: রানিগঞ্জের পাঞ্জাবি মোড়। ২ নম্বর জাতীয় সড়ক জাতীয় সড়কের পাশেই রানিগঞ্জের ৬ এবং ৭ নম্বর কলোনি। এখানেই বাড়ি রাজু ঝা ওরফে রাজেশ ঝার। সূত্রের খবর, বহুকাল আগে বিহারের দ্বারভাঙা জেলা থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে এখানে আসে রাজু (Raju Jha Murder Case)। তারপর রানিগঞ্জের মারওয়াড়ি স্কুলে ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়াশোনা। স্কুলের পাঠ চুকিয়ে ছেলেবেলাতেই ঢুকে পড়েছিলেন কয়লার কারবারে। ৮০-৯০ দশকের কয়লা মাফিয়া সুরজু উপাধ্যায়ের ট্রান্সপোর্টের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল এই রাজু। প্রথমদিকে কয়লার ট্রাকের খালাসির কাজ করতে করতে হাত পাকাতে শুরু করে। কিন্তু, এই সামন্য খালাসিই কিছুদিনের মধ্যে কয়লা কারবারের আধার পথের সমস্ত অলিগলিতেই অবাধ বিচরণ শুরু করে দেয়। হাতে আসে ক্ষমতা বাড়তে থাকে দাপট।
সুরজের মৃত্যুর পর অলিখিতভাবে তাঁর কারবারের বেতাজ বাদশা হয়ে যান রাজু। গোটা কারবারই তাঁর নিয়ন্ত্রণে চলে য়ায়। ২০০০ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত তাঁর কয়লার কারবারে রীতিমতো ফুলেফেঁপে ওঠে। রানিগঞ্জ থেকে ডানকুনি পর্যন্ত একচেটিয়া কয়লার প্যাড তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল। কয়লার কালো কারবারে হাত পাকিয়ে রাজু হয়ে ওঠে ‘ব্যবসায়ী’। ২০১৫-১৬ সাল নাগাদ রানিগঞ্জ ছেড়ে পরিবার নিয়ে রাজু পাড়ি দেয় দুর্গাপুরে। সেখানে একের পর এক ব্যবসা শুরু হয়ে যায়। রেস্তোরাঁ, হোটেল, ট্রান্সপোর্ট, পার্কিং জোন, শপিং মলের ব্যবসায় আরও ফুলেফেঁপে ওঠে রাজু। বাম আমলে তদানন্তীন শাসকদলের সঙ্গেও তাঁর রীতিমতো ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে খবর। পালাবদলের পর তৃণমূলের সঙ্গে বাড়ে ঘনিষ্ঠতা।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে দিলীপ ঘোষের উপস্থিতিতে রাজু ঝা বিজেপিতে যোগদান করে। এমনকী ভোটে তাঁকে দলের তরফে টিকিট দেওয়া হতে পারে বলেও ছড়ায় জল্পনা। যদিও শেষ পর্যন্ত টিকিট দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে রানিগঞ্জ থেকে রাজু চলে গেলেও ৬-৭ নম্বর কলোনির বাসিন্দাদের দাবি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তাঁদের সঙ্গে। এমনকী কেউ বিপদে পড়লে যেন প্রথম ফোনটা তাঁর কাছে যায়, এমনই ছিল রাজুর নির্দেশ। প্রতি বছর কালীপুজোতেও আসতেন সেখানে। পাড়ায় মন্দির তৈরি করে দেওয়া, কারও বিয়েতে সাহায্য করা, বিপদে পড়লে হাসপাতালে টাকা-পয়সা দেওয়া, সবই করতেন রাজু। এক কথায় এলাকায় সমাজকর্মী হিসাবেই পরিচিতি বাড়ছিল তাঁর।
প্রসঙ্গত, কয়লাকাণ্ডে তাঁর বয়ান রেকর্ড করার জন্য সোমবার ডেকে পাঠিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট। শনিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ের (Shaktigarh) ১৯ জাতীয় সড়কের উপর ল্যাংচা হাবের কাছে খুন হয়ে যান রাজু। এদিকে যে গাড়িতে তিনি ছিলেন সেটি আবার গরু পাচার চক্রের অন্যতম পাণ্ডা এই আব্দুল লতিফের বলে জানা যাচ্ছে। যা নিয়েও ঘনাচ্ছে রহস্য। তাঁর মৃত্যুতে ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্তের দাবি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।