আসানসোল : রাতের অন্ধকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আলো নিভিয়ে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের ওপর লাঠিচার্জ করার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ক্যাম্পাসের ভিতরের সব আলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপরই চলে অবস্থানরত পড়ুয়াদের মারধর। পুলিশের মারে ৬-৭ জন পড়ুয়া আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তার মধ্যে এক ছাত্রীর চোট গুরুতর।
শুক্রবার আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সকাল থেকেই ছাত্র আন্দোলনের জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ অবস্থান-সহ নানা কর্মসূচি নেন পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চান্সেলর বা উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী কোনও সদুত্তর না দেওয়ায় আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমরণ অনশনের বার্তা দেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাঁদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান চলাকালীন অতর্কিতে পুলিশ এসে হামলা চালায় ও লাঠিচার্জ করে। রক্তাক্ত হন বিক্ষোভকারীরা।
পড়ুয়াদের দাবি, বিশ্ববিদ্যায় কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে দেওয়া নোটিসে জানানো হয় অনলাইনে নয়, পরীক্ষা হবে অফলাইনেই। এরপরই শুক্রবার সকাল থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয় কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে না পেরে পথ অবরোধ করেন পড়ুয়ারা। তারপর পাঁচিল টপকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। শুধু তাই নয়, নির্মীয়মাণ একটি ভবনের পাঁচ তলার ওপর গলায় দড়ি দিয়ে ছাদ থেকে ঝুলে পড়ার চেষ্টাও করেন এক পড়ুয়া।
এরপরই পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়। শেষ পর্যন্ত আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ ও অন্য পড়ুয়ারা সেখানে ওই ছাত্রকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এ দিকে দুপুর নাগাদ বিক্ষোভরত এক পড়ুয়া আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দিন দুয়েক আগে অনলাইনে পরীক্ষার দাবিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পড়ুয়াদের আন্দোলনের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নীতিগতভাবে তাঁদের দাবি মেনে নিয়েছিল। পরে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়, উপাচার্যদের সঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর যে বৈঠক আছে, সেই বৈঠকে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠক না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। বৃহস্পতিবার রাতেই পড়ুয়াদের তা জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই শুক্রবার সকাল থেকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পড়ুয়ারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তী জানান, রাজ্যের অন্যান্য উপাচার্যদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সেই বৈঠক অনিবার্য কারণে না হওয়ায় নতুন করে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তাই আগামী ৩০ মে থেকে পরীক্ষা অফলাইনেই হবে। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, এখন সব ক্যাম্পাস খোলা রয়েছে। তাহলে অফলাইনে পরীক্ষায় আপত্তি কিসের? যদিও, পড়ুয়ারা রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ টেনে অনলাইনে পরীক্ষার দাবিতে অনড় রয়েছেন।