দুর্গাপুর: এ যেন এক রূপকথার গল্প। দুর্গাপুরের (Durgapur) ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের দেশবন্ধু নগর কলোনির বাসিন্দা সরস্বতী (Swaraswati) রজক। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে চলেছে সরস্বতীর পড়াশোনা। বাবা রজক মিস্ত্রি পেশায় গ্যাস মিস্ত্রি। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গ্যাসের ওভেন মেরামতির কাজ করেন। সরস্বতীর মা গৃহবধূ। অর্থ কষ্টের জেরে ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়েছে সরস্বতীর দাদার পড়াশোনা। অ্যাসবেসটসের ছাউনির ঘরে কাঠের উনুনে চড়ে রান্না। সংসারে একমাত্র রোজগেরে সদস্য নিত্যানন্দই। বিলাসিতার ভাবনাই যেন এই সংসারে বিলাসিতা। কিন্তু, মেধাকে সঙ্গী করে ছোট থেকে বড় স্বপ্ন দেখে এসেছে দুর্গাপুরের সরস্বতী। এলাকাতেও ছোট থেকে মেধাবী ছাত্রী বলেই পরিচিত। রস্বতীর বাবা নিত্যানন্দ রজক পেশায় গ্যাস মিস্ত্রি। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গ্যাসের ওভেন মেরামতির কাজ করেন। একমাত্র রোজগেরে নিত্যানন্দের সংসারে চারজন সদস্য। বিলাসিতার ভাবনাই বিলাসিতা এই সংসারে। কিন্তু, মেধার জোরে দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্যে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে (AIIMS) পৌঁছে গেল সরস্বতী।
চিকিৎসার অভাবে দিদিমার মৃত্যু দেখেছিল সরস্বতী। তারপর থেকেই শুরু লড়াই। ছোট থেকেই জেদ চিকিৎসক হওয়ার। পড়াশোনা শুরু স্থানীয় শিশু শিক্ষা কেন্দ্র থেকে। স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর পর বিজ্ঞান নিয়ে রানীগঞ্জের ত্রিবেণীদেবী ভালোটিয়া কলেজে পড়াশোনা। এরইমধ্যে ২০২২ সালে ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটে বসে। সুযোগ এসে যায় অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে পড়ার (AIIMS)। এখন তার লক্ষ্য চিকিৎসক হয়ে দিন দরিদ্র মানুষের সেবা করা। দিল্লির এইমসের তিন রাউন্ড টেস্টে সাফল্যের সঙ্গে ঊত্তীর্ন হয়েছে সরস্বতী। ১০০ পার্সেন্টাল পেয়ে ওভারঅল র্যাঙ্কিং হয়েছে ১।
কী করে মিলল এত বড় সাফল্য? উত্তরে সরস্বতীর অকপট উত্তর, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৯ ঘণ্টা পড়াশোনা করতাম। সারা রাত জেগে পড়তাম। মা জেগে বসে থাকত। আমার দাদার গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। কারণ বাবার পক্ষে দুই ভাই-বোনকে একসঙ্গে পড়ানো বাবার পক্ষে সম্ভব ছিল না। দাদা তখন বলে আগে বোন আগে পড়াশোনা করুক। আমাদের আর্থিক অবস্থা আবার ভাল হলে আমি পড়ব। আমার সাফল্য়ে দাদাও খুশি। ও এবার আইন নিয়ে পড়াশোনা করবে।”