আসানসোল: প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারি এলে দেখা মেলে তাঁর। সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে নেন চুনের বস্তা, রং, তুলি। ফাঁকা দেওয়ালে সাদা রং করে তার উপর নিষ্ঠাভরে আঁকেন নেতাজির (Netaji Subhash Chandra Bose) মুখ। পাশে লেখা থাকে জয়তু নেতাজি। কুলটির বেজডি গ্রামের বিশ্বনাথ বাউরির এ যেন ফি বছরের কাজ। এলাকায় লোকজন তো তাঁকে ‘নেতাজি শিল্পী’ বলেই ডাকেন। বিশ্বনাথবাবুর বিশেষত্ব হল, তিনি দেওয়ালে সাদা রং করে, নেতাজির মুখ আঁকতে বড় জোর সময় নেন এক থেকে দেড় মিনিট। ফরওয়ার্ড ব্লকের শ্রমিক সংগঠন টিইউসিসি এই ভার দেন বিশ্বনাথবাবুর কাঁধে। ২৩ জানুয়ারির আগে তাঁর হাতেই নতুন করে মূর্ত হয়ে ওঠেন ভারতমায়ের বীর সন্তান সুভাষ বোস। শুধু এই রাজ্যেই নয়, ভিনরাজ্যেও ডাক পড়ে বিশ্বনাথবাবুর। খুব অল্প বয়স থেকে নেতাজির ছবি আঁকেন তিনি। এখন তো রীতিমতো ‘স্পেশালিস্ট’। জানুয়ারির এই সময়টা তাঁর ফুরসত থাকে না একেবারে। প্রচুর দেওয়াল অপেক্ষায় থাকে তাঁর রং-তুলির টানের।
২৩ জানুয়ারির আগেই কুলটি, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াজুড়ে দেওয়ালে দেওয়ালে নেতাজির ছবি, লিখনের দায়িত্ব তাঁর। কোথাও লেখেন, জয়তু নেতাজি, কোথাও আবার অখণ্ড ভারতের স্লোগান। শীতের সকালেও দু’টো পান্তাভাত মুখে দিয়ে বেরিয়ে পড়েন বিশ্বনাথবাবু। বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পার হয়ে যায়। সাইকেলে ঝোলানো ব্যাগে রং, তুলির সঙ্গে একটা ছোট্ট টিফিন বাক্সও থাকে।
বিশ্বনাথবাবু বছরভর খেতখামারি করেন। কৃষিই তাঁর মূল পেশা। তা থেকেই পেট চলে। রোদে পুড়ে, জলে ভিজে ফসল ফলায় তাঁর দুই হাত। এই হাতেই আবার জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকেন দেশনেতাকে। সেই ১৯৭৭ সাল থেকে আঁকাআঁকির সঙ্গে যুক্ত তিনি। তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন।
কৃষক পরিবারের ছেলে তিনি। তেমন রোজগার ছিল না। সে সময় বামফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক আঁকতেন। এরই ফাঁকে সময় সুযোগ করে নেতাজিতেও আঁকতেন বিশ্বনাথবাবু। সেই সময় থেকেই মকশো করা শুরু। তৎকালীন বাম বিধায়ক মধু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে পড়েন। দলের কাজে তাঁকে ডাকা হতো। তখন থেকেই নানা কর্মসূচির দেওয়াল লিখনে দলের ভরসা ছিলেন বিশ্বনাথবাবু।
এখন আর বামেরা কোথায়? কোথায় ফবর তেমন দাপট? তাই দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকতে হয় না সিংহ। তবে ফরওয়ার্ড ব্লকের শ্রমিক সংগঠন টিইউসিসির বরাতে তিনি কোলিয়ারি এলাকার দেওয়ালে দেওয়ালে নেতাজির ছবি এঁকে বেড়ান। বছর পাঁচেক আগে স্ট্রোক হয়েছিল। ডানহাত প্রায় অবশই হয়ে গিয়েছিল। এখন ভাল আছেন। সেই হাতেই মুহূর্তে এঁকে ফেলেন নেতাজিকে।