Asansol bypoll : আসানসোলে ইতিহাস তৃণমূলের, কেন পিছিয়ে পড়ল বিজেপি?

Asansol bypoll : বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, ভোট পরবর্তী হিংসার জেরে তাঁদের দলের কর্মীরা প্রচারে নামতে সাহস পাননি। অনেকে ভয়ে ভোট পর্যন্ত দিতে যাননি।

Asansol bypoll : আসানসোলে ইতিহাস তৃণমূলের, কেন পিছিয়ে পড়ল বিজেপি?
আসানসোল লোকসভা আসন প্রথমবার জিতল তৃণমূল
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 16, 2022 | 8:07 PM

আসানসোল : একটা দল রাজ্যে প্রায় এগারো বছর ক্ষমতায় এলেও আসানসোল লোকসভা আসনে কোনওদিন জেতেনি। আর একটি দল এ রাজ্যে যাদের কিছুই ছিল না তারা গত দুটি লোকসভা নির্বাচনে ওই আসনে জিতেছিল। দুটি দলের কাছেই এবারের লড়াই ছিল মর্যাদার। সেখানে শেষ হাসি হাসল প্রথম দলটি অর্থাৎ তৃণমূল। আসানসোল লোকসভা আসনে প্রথমবার জিতলেন তৃণমূল প্রার্থী। শুধু জেতাই নয়, ২০১৯ সালে বিজেপি প্রার্থীর থেকে জয়ের ব্যবধানও বেশি ঘাসফুল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহার।

আসানসোল লোকসভার ইতিহাস বলছে, এই আসন সবচেয়ে বেশিবার দখলে রেখেছে বামেরা। ২০০৯ সালে শেষবার সিপিএম প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন বংশগোপাল চৌধুরী। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। আর ঘাসফুল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম লোকসভা নির্বাচন হয় ২০১৪ সালে। ওই নির্বাচনে দুই ফুলের জোর টক্কর চলে। শেষপর্যন্ত পদ্মফুলের প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় জেতেন। তৃণমূলের দোলা সেনকে ৭০ হাজারের বেশি ভোটে হারান প্রথমবার ভোট ময়দানে নামা গায়ক-রাজনীতিক।

২০১৯ সালেও আসানসোলে বাবুলকেই প্রার্থী করে বিজেপি। অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল প্রার্থী বদল করে। এবার বাবুলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হন মুনমুন সেন। প্রার্থী বদল করেও বাবুলকে ধাক্কা দিতে পারেনি তৃণমূল বরং বাবুলের জয়ের ব্যবধান অনেকটাই বাড়ে। ১ লক্ষ ৯৭ হাজারের বেশি ভোটে জেতেন তিনি।

২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের পর বাংলায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমূল পরিবর্তন হয়। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাম-কংগ্রেস ছিল প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু, ২০১৯ সালের পর বিরোধী দলের ব্যাটন কার্যত চলে যায় বিজেপির দখলে। যদিও তখন বিধানসভায় তাদের প্রতিনিধি মাত্র ৩ জন। কিন্তু, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে রাজ্যে ১৮টি আসন জয়ের পর বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শাসকদল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক বাড়ে। যা বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত জারি ছিল।

২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে তৃতীয়বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হন। নির্বাচনের পর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরেন অনেকে। এইরকম পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ায় বিজেপি ছাড়েন বাবুল সুপ্রিয়। যোগ দেন তৃণমূলে। একইসঙ্গে আসানসোলের সাংসদ পদ থেকেও ইস্তফা দেন তিনি।

তাঁর ছেড়ে যাওয়া আসনেই উপনির্বাচন হল। আর সেখানে জিতলেন তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা। তিনিও একসময় বিজেপির সাংসদ ছিলেন, ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। পরে কংগ্রেসের ঘর ঘুরে তৃণমূলে যোগ দেন। উপনির্বাচনে জিতে শত্রুঘ্ন সিনহা শুধু প্রথমবার তৃণমূলকে আসানসোল লোকসভা আসন জয়ের স্বাদ এনে দিলেন না, বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালকে হারালেন তিন লক্ষের বেশি ভোটে।

২ মাস আগেই আসানসোল পৌরনিগমের ভোট হয়েছে। সেখানে জিতে বোর্ড গঠন করেছে তৃণমূল। এবার আসানসোল লোকসভা আসনও জিতল তারা। আসানসোলের প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোটার অবাঙালি। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, সেজন্যই শত্রুঘ্ন সিনহাকে প্রার্থী করতে বেশি ভাবেননি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শত্রুঘ্নকে বহিরাগত বলে আক্রমণ করা হলেও তা ভোটারদের মনে বিশেষ প্রভাব যে ফেলেনি, তার প্রমাণ আজকের ফল।

পরপর দুবারের জেতা আসন হাতছাড়া হল কোন কারণে?

রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, এর অনেকগুলি কারণ রয়েছে। প্রথমত, উপনির্বাচনে সাধারণত রাজ্যের শাসকদলকেই সমর্থনের একটা মানসিকতা কাজ করে ভোটারদের মধ্যে। তার সঙ্গে রয়েছে দলীয় সংগঠনের সক্রিয়তা। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া জিতেন্দ্র তিওয়ারি চেষ্টা করলেও আসানসোলে গেরুয়া শিবিরের সংগঠন তেমন মজবুত নয়। এর পাশাপাশি আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয়র নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক তৈরি হয়েছিল। বাবুল তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ওই ভোটব্যাঙ্কের সমর্থনও পেয়েছেন ঘাসফুল প্রার্থী শত্রুঘ্ন।

বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য বলছেন, রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস চলছে। ভোট পরবর্তী হিংসার জেরে দলের কর্মীরা প্রচারে নামতে সাহস পাননি। অনেকে ভোট দিতেও যাননি। সেজন্যই দলের এই খারাপ ফল।

আরও পড়ুন : Asansol By Election: ‘সরি স্যর’, মোদীর কাছে দুঃখপ্রকাশ অগ্নিমিত্রার