আসানসোল: সরকারি জমি দখল করে তৈরি হয়েছে বেআইনি নির্মাণ। রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া শিল্প তালুকে বৈধ প্ল্যান ছাড়াই হয়েছে একাধিক নির্মাণ। অভিযোগ রয়েছে ১১ টি কারখানার বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে আসানসোল পুরনিগম ৫০০ কোটি টাকারও বেশি জরিমানার নোটিস জারি করেছে কারখানাগুলিকে। এবার কারখানার মালিকরা জরিমানা মুকুবের আবেদন জানালেন মেয়রের কাছে। তাঁরা মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন আসানসোল পুরনিগমে। কিন্তু মেয়র সাফ জানালেন অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলতে হবে নয়তো জরিমানা দিতে হবে। ১৫ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হল শিল্পপতিদের।
জামুরিয়া ও রানিগঞ্জ শিল্পতালুক এলাকা দুটি আসানসোল পুরনিগমের আওতায়।
শ্যামসেল এন্ড পাওয়ার লিমিটেড , গগন ফেরোটেক প্রাইভেট লিমিটেড , সত্যম ধাতু উদ্যোগ , রেশমি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিস , সুপার শক্তি , ক্লাস্টার স্পঞ্জ প্রাইভেট লিমিটেড, জয় বালাজি, গিরিধন মেটাল, সুপার স্মেটার, শ্যাম মেটালিকের মত কারখানাগুলিকে অবৈধ নির্মাণের জন্য জরিমানার নোটিস পাঠানো হয়েছে। যদিও মেয়রের চেম্বার থেকে বেরিয়ে কারখানার মালিকরা এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
উল্টে তাঁরা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। জরিমানার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে শিল্পপতিরা দাবি করেন জলের সমস্যা নিয়ে মেয়রের সঙ্গে দেখা করেছেন। কেউ কেউ ক্যামেরা দেখে এড়িয়ে যান। যদিও মেয়র বলেন ওরা এসেছিলেন জরিমানা মুকুবের আবেদন নিয়ে।
আসানসোল পুরনিগমের জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জ শিল্প তালুক এলাকায় অবৈধ নির্মাণ করেছেন বলে একাধিক কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই উঠছে। তাদেরকে সেই নির্মাণের জন্য জরিমানা দিতে বা অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই আসানসোল পুরনিগমের তরফে নোটিস জারি করা হয়েছে।
কয়েক মাস আগে আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারিও এই দুই শিল্প তালুকে বেআইনি বা অবৈধ নির্মাণ নিয়ে সরব হন। পাশাপাশি তিনি এই অবৈধ নির্মাণ ভাঙা নিয়ে আসানসোল পুরনিগমের সদিচ্ছা ও পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। উৎসবের মরসুম শেষ হওয়ার পরেই, এবার আসানসোল পুর কর্তৃপক্ষ শিল্প তালুকে বেআইনি বা অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে।
প্রসঙ্গত, আসানসোল পুরনিগমের রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া শিল্প তালুক এলাকায় অবৈধ নির্মাণের কারণে বিভিন্ন কারখানাকে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি জরিমানা দেওয়ার নোটিস দেওয়া হয়েছে। কারণ বিভিন্ন কারখানা নির্ধারিত বৈধ প্ল্যান বা নকশা ছাড়াও নির্মাণ করেছে। যে কারণে ওইসব এলাকায় জলনিকাশী ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
পুরনিগম গা ঝেড়ে উঠতেই রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়ায় শিল্প তালুকে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কারখানার মালিকদের এক প্রতিনিধিরা আসানসোল পুরনিগমে গিয়ে মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তারা আলোচনায় বসে এই বিষয়ে কিছুটা নমনীয় হওয়ার জন্য মেয়রকে অনুরোধ করেন। তবে মেয়র তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই ব্যাপারে কোনও ধরনের নমনীয়তা দেখানো হবে না। শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, তাদেরই উচিত অবৈধ নির্মাণের যে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে তা দেওয়া বা অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলা। এ ছাড়া আর কোনও বিকল্প রাস্তা নেই।
মেয়র স্পষ্টভাবে বলেন, “মানুষের জন্য শিল্প স্থাপন ও বিনিয়োগ করা উচিত। তবে তা নিয়ম মেনে করা উচিত। কেউ তাদেরকে অবৈধ নির্মাণের অনুমতি দেয়নি।” মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, “অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে বর্তমান পুরবোর্ড অবৈধ নির্মাণের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। সেটাই আগামীতে চলবে।”