পশ্চিম মেদিনীপুর: অবশেষে আরও এক নেতার ঘরওয়াপসি তৃণমূলে। দিল্লিতে গিয়ে দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)। প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ক দলে ফিরলেন ত্রিপুরায় গিয়ে! অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা থেকে বিজেপিকে নিশানা করার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ক্ষমা চাইলেন রাজীব। তাঁর প্রত্যাবর্তনে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে শাসক-বিরোধী শিবিরে। রাজীবের তৃণমূলে ‘ঘরওয়াপসি’ নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
রাজীবের ঘরওয়াপসি প্রসঙ্গে প্রথমটায় মুখ না খুললেও পরে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি বলেন, “এটা তো জানাই ছিল যে রাজীব দলে থাকবেন না। শুধু সময়ের অপেক্ষা। নো এন্ট্রি বোর্ড উঠে যেতেই এন্ট্রি নিয়ে নিয়েছে।” পাশাপাশি, ত্রিপুরায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা করা প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, “বাংলা থেকে লোক নিয়ে গিয়ে সভা করে বিপ্লব দেবকে হটিয়ে দেবেন! এত সোজা! স্বপ্ন দেখছেন!”
একদা, যে রাজীবকে নিজদলে স্বাগত জানিয়ে বিজেপি নেতা বলেছিলেন, “রাজীব ভাল ছেলে। আমাদের দলে এলে ও ভাল করে কাজ করবে।” সেই রাজীব সম্পর্কেই যেন ‘মোহভঙ্গ’ হয়েছে দিলীপ ঘোষের। বস্তুত, বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই তৃণমূলে ফেরার জন্য পা বাড়িয়েছিলেন রাজীব। একাধিকবার তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্-ও সেরেছিলেন।
রবিবার ত্রিপুরায় দাঁড়িয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করে নিলেন তাঁর ভুল হয়েছিল দল ছেড়ে। তিনি দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আধ ঘণ্টা ধরে যিনি বুঝিয়েছিলেন তিনি আর কেউ নন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে ফের তৃণমূলে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তাই অভিষেককে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ ও আর কৃতজ্ঞতা জানালেন তিনি। একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করলেও বেশির ভাগ সময়ই অভিষেককেই নিজের নেতা হিসাবে বর্ণনা করলেন রাজীব।
এর পর বিজেপিকে নিশানা করে রাজীব বলেন, “তখনও বলেছিলাম মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। তখন আমাকেও ‘রোজি স্বপ্ন’ দেখানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল মানুষের জন্য করা করতে চাইলে ভারতীয় জনতা পার্টি করবেন। নানারকম কথা বলা হয়েছিল। আমি সত্যি যখন দলে ঢুকেছি দলে তখন অনেক উন্নয়ন, শিল্পের কথা বলা হয়েছিল। আমি যে ভুল করেছি, চাই না সারা ভারতবর্ষের মানুষ ওই ভুলটা করুক। আর যেন কেউ ভারতীয় জনতা পার্টি না করে সেটা বলার জন্য মঞ্চে মাইকটা নিয়েছি।”
এখানেই শেষ নয়। রাজীব যোগ করেন, “সবকা সাথ সবকা বিকাশের কথা বলা হয়েছিল। আজ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাহস থাকলে বুকে হাত দিয়ে বলুন, আমি বলেছিলাম দ্রব্যমূল্য হ্রাস করতে হবে। পেট্রল ও ডিজেল ও গ্যাসের দাম কমাতে হবে। খালি বলেছিল হচ্ছে, হবে…”। ভোট আর ক্ষমতা দখল ছাড়া বিজেপির কোনও এজেন্ডা নেই বলে মন্তব্য গত জানুয়ারিতে চাটার্ড ফ্ল্যাইটে গিয়ে গেরুয়া পতাকা তুলে নেওয়া রাজীবের।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিমত, তৃণমূলে কে ফিরবেন বা কাকে ফেরানো হবে তার বড় দায়িত্ব নিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তিনি কয়েক দিন আগে খড়দহের সভায় ঘোষণা করেছিলেন, যাঁদের ফেরানো হচ্ছে, তাঁদের প্রায়শ্চিত্ত করেই তবেই এন্ট্রি হচ্ছে। অভিষেকের নিজের কথায়, ‘অত সোজা নয়’। এমনকি তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, সব দলবদলুকে চান্স দিলে বিজেপি বাংলা থেকে উঠে যাবে।
রাজীব কোন প্রায়শ্চিত্ত করে তৃণমূলে ফিরলেন সেটা দলের অন্দর খবর। তবে প্রকাশ্য সভায় তিনি নিজেই জানালেন লজ্জিত এবং অনুতপ্ত। তাঁকে ভুল বুঝিয়ে বিজেপি-তে নিয়ে যাওয়া হয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে তাঁকে আরেকবার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অভিষেককে বারংবার ধন্যবাদ জানান রাজীব। বলেন, ‘আমার নেতা’।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মাদার ফিগার’ বলে এসেছেন রাজীব। যদিও একুশের ভোটে একে অন্যকে আক্রমণ-ও কম করেননি। তাঁর মন্ত্রিত্বকালে বন দফতরে বড় দুর্নীতির অভিযোগ করে হাওড়াতেই আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সাফ জানিয়ে দেন এর তদন্তও হবে। আর যে রাজীব এদিন বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, ভোট আর ক্ষমতা দখল ছাড়া তাদের আর কোনও এজেন্ডা নেই, ভোটের সময় মমতাকে সাম্প্রদায়িক বলতেও দ্বিধা করেননি। সেই রাজীবের দলে ফেরায় কার্যত যেন মুখে কুলুপ এঁটেছে শাসক শিবির। ‘দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত’ বলেই কার্যত দায় সেরেছেন শাসক শিবিরের অধিকাংশ নেতা। রাজীবের ‘ঘরওয়াপসি’-তে বিশেষ খুশি যে নন অনেকেই তা মুখে না বললেও ঠারেঠোরে স্পষ্ট দলের অন্দরে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: Rajib Banerjee joins TMC: অনুব্রত বলছেন ‘শুভবুদ্ধি’, রাজীবকে ‘৫৫ বছরের শিশু’ বলে খোঁচা অর্জুনের