TV9 Bangla Digital | Edited By: tista roychowdhury
Oct 06, 2021 | 10:59 PM
তন্ময় প্রামাণিক: না, দেবীর চক্ষুদান নয়। বরং জ্ঞানের চক্ষুদানেই রত হয়েছেন দুই শিক্ষক। সবংয়ের প্রত্য়ন্ত এক গ্রামে অন্ধকার অপুষ্ট শবর শিশুদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে বর্ণপরিচয়। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাড়াটির দূরত্ব বড়জোর আটশো মিটার। তবুও এখানে আসেনি পড়াশোনার চল। বাসিন্দা সংখ্যা একশো পেরোলেও সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির গণ্ডি টপকেছে মাত্র একজন। প্রশাসন, রাজনীতির লোকেরা কেউ কে দেখেননি? খোঁজ করেননি এই না পাওয়া মানুষগুলো কেমন অবস্থায় আছেন? প্রশ্ন উঠছে। এদের দুয়ারে কোনো সরকার পৌঁছয়নি। এদের দুয়ার জুড়ে শুধু অশিক্ষা, অপুষ্টি, অভাব আর অন্ধকার।
এবার সেই স্কুলবিমুখ অন্ধকারের মাইলস্টোন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাগালপাড়াতেই 'দুয়ারে পাঠশালা' নিয়ে হাজির দুই শিক্ষক। সবংয়েরই চাঁদকুড়ির বাসিন্দা শান্তনু অধিকারী ও পূর্ব মেদিনীপুরের হাউরের বাসিন্দা ভাস্করব্রত পতি। তাঁদের উদ্যোগেই চালু এই নতুন পাঠশালা। উদ্বোধন করেন আশি বছরের দেবেন বাগাল।
সবংয়ের দাঁররা গ্রাম পঞ্চায়েতের খোলাগেড়্যা মৌজার সেই বাগালপাড়া। অফুরন্ত মদের জোগানে শৈশব সেখানে নেশায় ডুবে রয়েছে। নাবালক অবস্থাতেই বিয়ে, সন্তান ধারণ যেন এখানকার চিরাচরিত "রীতি নীতি"। এ যেন সদ্য জনপ্রিয় হওয়া বিরহী ওয়েব সিরিজ। তীব্র অভাব এবং বঞ্চনা সঙ্গী। অশিক্ষার গাঢ় অন্ধকারে ডুবে এখানকার প্রায় সকলেই। বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা আর দিনমজুরিই উপার্জনের একমাত্র উপায়। রোজগারের সিংহভাগই চলে যায় নেশার পেছনে। সারা পাড়াতেই নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। এর পাশাপাশি রয়েছে স্থানীয় মাতব্বর দের বিরুদ্ধে শ্রমশোষণের মতো গুরুতর অভিযোগও। এ যেন উন্নয়ন বহির্ভূত কোনো দ্বীপ! এদের খোঁজ পড়ে শুধু ভোটের সময়। ভোটার কার্ড আছে। দু একজনের আধার কার্ড আছে। আর কিছু নেই।
২৮ জন পড়ুয়া নিয়ে 'বর্ণপরিচয়' নামে এই পাঠশালাটির সূচনা ঘটল বুধবার। উদ্দেশ্য, এখানকার শৈশবকে স্কুলমুখী করে তোলা। শুধু ছোটরা নয় অক্ষরজ্ঞানহীন বড়দেরও স্বাক্ষর করে সামাজিক চেতনার বিকাশ ঘটানো। এদিন জীবনে প্রথমবার হাতে খাতা, কলম, বই তুলে নিয়ে দেবীর আরাধনা করল এখানকার শিশুরা। তবে কোনও প্রথাগত মন্ত্রোচ্চারণে নয়। দেবী দুর্গার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে মাটির ঘটে জলসিঞ্চন করে শপথবাক্য পাঠের মাধ্যমে।
ভাস্করব্রত পতি কথায়, "শিক্ষাই পারে এখানকার বাসিন্দাদের প্রকৃত উন্নয়নের সরণীতে নিয়ে যেতে। নিজেদের অধিকারবোধ সম্পর্কে সচেতন করতে। মুষ্টিমেয় ত্রান কখনো সমস্যার সমাধান করতে পারেনা, পরিত্রানের পথ খোঁজাই আসল। তাই এই উদ্যোগ। তিনি জানান, এই পাঠশালা আপাতত সপ্তাহে চারদিন চলবে। জোর দেওয়া হবে খেলাচ্ছলে পড়াশোনায়। রয়েছে পুজোর পরে এখানকার শিশুদের নিয়ে একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণের পরিকল্পনাও"।
শিক্ষক শান্তনু অধিকারী বলেন, "এই বাগালরা আসলে খেড়িয়া শবর। এঁদের প্রকৃত পদবি বাগাল নয়, দেহরি। স্বভাবগত কারণেই এঁরা ভীতু ও মুখচোরা। সভ্যতাবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে ভালোবাসে। ভোটার লিস্টে নাম তোলার সময়ই ঘটে গেছে পদবি বিভ্রাট। যে কারণে আজও তাঁদের তপশিলী উপজাতির স্বীকৃতি মেলেনি। ফলে এঁরা বঞ্চিত হচ্ছে নানা ধরনের সরকারি সুবিধা থেকেও"। তিনি আরও বলেন, "কেবল পাঠশালা নয়। আগামিদিনে এঁদের নানা ধরনের সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিতে প্রশাসনিক স্তরেও কাজ করবে বর্ণপরিচয়"।