AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Subal Soren: চাকরিপ্রার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে, সুবলের ছবি আঁকড়ে সরকারের কাছে কাতর আর্জি স্ত্রী সন্ধ্যার

Subal Soren family: সুবল সোরেনের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মোহনপুর ব্লকের সাউটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকী-সামাঠ গ্রামে। চাকরি করতেন এই জেলারই ডেবরা ব্লকের বউলাসিনি বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেই সূত্রে স্ত্রীকে নিয়ে ডেবরাতেই থাকতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর দু’বছরের কন্যাসন্তানকে নিয়ে স্ত্রী সন্ধ্যা আবার ফিরে গিয়েছেন সরকী-সামাঠ গ্রামে।

Subal Soren: চাকরিপ্রার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে, সুবলের ছবি আঁকড়ে সরকারের কাছে কাতর আর্জি স্ত্রী সন্ধ্যার
স্বামীর ছবি নিয়ে সরকারের কাছে কাতর আর্জি সুবল সোরেনের স্ত্রী সন্ধ্যা সোরেনেরImage Credit: TV9 Bangla
| Edited By: | Updated on: Sep 08, 2025 | 12:01 AM
Share

মেদিনীপুর: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা আবারও পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু, ‘দাগি’ তালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় বসতে পারলেন না আর এক চাকরিহারা শিক্ষক সুবল সোরেন। হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোকের কারণে গত ১৫ অগস্ট কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। রবিবার এসএসএসি পরীক্ষার দিন সকাল থেকে দু’বছরের কন্যাকে কোলে নিয়ে মাথা নিচু করে বসে রয়েছেন সুবলের স্ত্রী সন্ধ্যা। আর বলছেন, স্বামী বেঁচে থাকলে তিনিও পরীক্ষায় বসতেন। মেধার জোরে আবারও ফিরে পেতেন চাকরিটা। কিন্তু তা আর হল কোথায়? এখন সন্ধ্যার আর্জি, “সরকার যেন আমার একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। নাহলে আমার সংসার চলবে কী করে? মেয়েকে মানুষ করব কিভাবে?”

ভাইকে হারিয়ে শোকাতুর সুবলের দাদা কৃষ্ণ সোরেনও। ভ্রাতৃবধূর জন্য সরকারের কাছে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, “চাষ করে খাব, সে জমিও নেই। বহুকষ্টে মজুর খেটে সংসার চলে। বৃদ্ধ বাবাও অসুস্থ। চাকরি চলে যাওয়ার পর থেকেই তো দুশ্চিন্তায় ছিল ভাই। সেই চিন্তাতেই রক্তচাপ বাড়ল। উচ্চ রক্তচাপ থেকে ব্রেনস্ট্রোকে ভাইয়ের প্রাণটা গেল। এখন ছোট্ট ভাইঝি আর বউমার সংসার চলবে কিভাবে? সরকার কিছু না ভাবলে ওদের আত্মহত্যা ছাড়া কোনও পথ থাকবে না।”

সুবল সোরেনের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মোহনপুর ব্লকের সাউটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকী-সামাঠ গ্রামে। চাকরি করতেন এই জেলারই ডেবরা ব্লকের বউলাসিনি বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেই সূত্রে স্ত্রীকে নিয়ে ডেবরাতেই থাকতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর দু’বছরের কন্যাসন্তানকে নিয়ে স্ত্রী সন্ধ্যা আবার ফিরে গিয়েছেন সরকী-সামাঠ গ্রামে। পরিবারের বক্তব্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে সুনাম ছিল সুবলের। মেধার ভিত্তিতেই চাকরি পেয়েছিলেন। দাদা কৃষ্ণ বলেন, “তফসিলি সংরক্ষণ তালিকার চতুর্থ স্থানে ছিল ভাই। রাজ্যের মধ্যে চতুর্থ স্থানে থাকা ব্যক্তির মেধা যাচাই সম্বন্ধে নিশ্চয় বলতে হবে না। তাছাড়াও দাগি তালিকাতেও নাম ছিল না। আবার পরীক্ষাতে বসলেই চাকরি পেয়ে যেত। কিন্তু সেই সূযোগটাই পেল না।”

Subal Soren Family (1)

সুবল সোরেনের স্ত্রী ও মেয়ে

পরিবারের লোকজন জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি যাওয়ার পর থেকেই চরম দুশ্চিন্তায় ছিলেন সুবল। মাঝে মাঝেই, স্ত্রী ও দাদাদের বলতেন, ৩১ ডিসেম্বরের পর কী হবে? তাই শিক্ষক আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। কলকাতাতে গিয়েও হয়ে উঠেছিলেন আন্দোলনের মুখ। কিন্তু ১১ অগস্ট হঠাৎ ডেবরার বড়িতেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১৫ অগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়। তারপর থেকেই স্ত্রী সন্ধ্যার জীবনে যেন আঁধার নেমে আসে।

চারটি ঘর বিশিষ্ট ছোট্ট একটি মাটির বাড়িতে তিন ভাই ও বাবা থাকেন। সামনের অংশে অ্যাসবেসটসের ছাউনি হলেও মাথায় খড়ের ছাউনি। চাষের জন্য রয়েছে বিঘে খানেক জমি। সন্ধ্যার কথায়, “আমার বাপের বাড়ির অবস্থাও ভাল নয়। ছোটবেলায় বাবা মারা যান। মা অনেক কষ্টে লোকের ঘরে মজুর খেটে আমাদের পাঁচ বোনকে মানুষ করেছে। ২০২২ সালে আমার বিয়ে হয়। কোলে দু’বছরের কন্যা। সরকার যদি কিছু একটা ব্যবস্থা না করে তো মেয়েকে নিয়ে ভেসে যেতে হবে।” স্থানীয় ব্লক প্রশাসন, তৃণমূল নেতা থেকে বিধায়ক, সকলের কাছেই আবেদন জানিয়েছেন। কৃষ্ণ বলেন, “আমরা দু’ভাই মাধ্যমিকের পরই পড়াশোনা ছেড়ে দিই। মজুর খেটে ছোট ভাইটাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে এমএ, বিএড পড়াই। তারই এমন অঘটন ঘটবে?” সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে সুবলের পরিবার। তারই মধ্যে সুবলের স্ত্রী সন্ধ্যার কাতর আর্জি, “সরকার তো যোগ্য, অযোগ্য সকলের কথা ভাবছে। আমার জন্য কিছু ভাবুক। আমার তো একটা ছোট্ট মেয়ে রয়েছে। সরকার না দেখলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই আমার।”