খড়গপুর: শুক্রবার লাদাখে বাস দুর্ঘটনায় (Ladakh Bus Accident) ৭ জওয়ানের মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল গোটা দেশ। লাদাখের তুর্তুক সেক্টরে এই মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় ৭ জওয়ানের মৃত্যুর পাশাপাশি আহত হন ১৯ জন। মৃতদের তালিকাতে ছিলেন বাংলার খড়গপুরের বাসিন্দা বাপ্যাদিত্য খুটিয়া(Indian Army Bappaditya Khutia)। পাড়ার সবথেকে ‘শান্ত’ স্বভাবের ছেলেটির এই মর্মান্তিক পরিণতিতে শোকের ছায়া নেমেছে গোটা এলাকায়। রবিবারই কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় ল্যান্সনায়েক বাপ্পাদিত্যের দেহ। বিমানবন্দরে সেনাবাহিনীর গার্ড অফ অনার দেওয়ার পর মরদেহবাহী শকট সোজা রওনা দেয় খড়গপুরের উদ্দেশে। এদিকে সকাল থেকেই শেষবার ছেলেকে দেখার অপেক্ষা খড়গপুরের চাঁচল ভারোটিয়ায় অপেক্ষায় করছিলেন বাপ্পাদিত্যের পরিবারের সদস্যরা।
২০০৯ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন বাপ্পাদিত্য। তারপর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গাতে পোস্টিং ছিল তাঁর। ২৭ এপ্রিল ছুটি কাটিয়ে সেনা ক্যাম্পে ফিরে গিয়েছিলেন বাপ্পাদিত্য। প্রতিবারের মতো এবারেও হাসিমুখেই বাপ্পাদিত্যকে বিদায় দিয়েছিল পরিবার। মা-বাবা ছাড়াও বাড়িতে স্ত্রী ও ১১ মাসের কন্যা সন্তান রয়েছে বাংলার এই বীর সৈনিকের। কিন্তু, এপ্রিলে বাড়ি ছাড়ার সময় কে জানত! এটাই শেষ দেখা। শুক্রবার যখন বাপ্পাদিত্যের বাড়িতে প্রথম তাঁর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছায় তখন যেন কেউ বিশ্বাসই করতে চাননি এ খবর। যদিও সময় গড়াতেই টিভির পর্দায় ভেসে ওঠে মৃত্যু সংবাদ। ডুকরে কেঁদে ওঠে গোটা পরিবার। বাবার মৃত্যুতে মায়ের কোলে থাকতেই বিষাদের ছায়া নামে ছোট্ট একরত্তির মুখেও।
ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছে, তবে কফিন বন্দি হয়ে। খবর পৌঁছতেই এদিন গোটা এলাকা জাতীয় পতাকায় মুড়ে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিকে দেহ পৌঁছনোর আগেই খড়গপুরের প্রশাসনিক কর্তারা এসে বাপ্পাদিত্যর পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়ে যান। মনে বিষাদের মেঘ জমা হলেও শক্ত হাতেই ছেলের শেষকৃত্যে হাত লাগান বাবা সুকুমার খুটিয়া। এদিন শোকাহত কণ্ঠেই তিনি বলেন, “আমার ছেলে দেশ বাঁচানোর কাজে গিয়েছিল। কিন্তু, আমার ছেলের জন্য যে এতগুলো মানুষ এখানো জড়ো হয়েছেন তা দেশের জন্য বড় কথা। আমার ছেলে কোনও খারাপ কাজে গিয়ে মারা যায়নি। আমার ছেলের মতো আরও হাজার হাজার ছেলে সেনায় যোগ দিয়েছে বলেই আমরা আজ শান্তিতে ঘুমোতে পারি। বাকিদের মতো আমার ছেলেও এই ভার নিয়েছে, এতে আমি গর্ব বোধ করি।”