খড়্গপুর: কালী পুজোর আগে কলকাতায় ব্যবসা করতে পারলে লাভের মুখ দেখা যায়। পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব হয়। সেই লক্ষ্যেই কলকাতায় আসছিলেন ওড়িশার পারাদ্বীপের কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। হাসি ফোটানো তো দূরের কথা চোখের জল নিয়ে কোন মুখে বাড়ি ফিরবেন, সেটাই বুঝতে পারছেন না তাঁরা। শুক্রবার রাতে যখন খড়্গপুরে বাসে আগুন লেগে যায়, জানালা-দরজা ভেঙে কোনও ক্রমে প্রাণ বাঁচান যাত্রীরা। কিন্তু মাথায় ঋণের বোঝা নিয়ে, আবার ওড়িশায় ফিরে কী করবেন, এটাই ভেবে পাচ্ছেন না ওই ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ বলছেন, বাসের আগুনে মরে গেলেই হয়ত এর থেকে ভাল হত। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মাদপুরে ওই ভায়বহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
জানা গিয়েছে যাত্রীদের একটা বড় অংশই ছিল ব্যবসায়ী। তাঁরা টাকা ধার করে ব্যবসার পণ্য নিয়ে কলকাতা এসেছিলেন কালী পূজার মরসুমে ব্যবসা করতে। ভেবেছিলেন পুজোয় বাজার জমবে, লাভের টাকা নিয়ে ঘরে ফিরে যাবেন তাঁরা। কিন্তু সে সব কিছুই হল না। চলন্ত বাসের আগুনে প্রাণ বাঁচলেও পুড়ে ছাই হয়ে গেল তাঁদের সমস্ত স্বপ্ন। লক্ষ লক্ষ টাকার জিনিস নিয়ে কলকাতায় আসছিলেন তাঁরা। তাঁদের কাছে এখন না আছে টাকা, না আছে ব্যবসার মালপত্র। পাওনাদারদের টাকা মেটাবেন কীভাবে, বাড়ির লোককে কী বলবেন, এটাই তাঁদের কাছে এখন একটা বড় প্রশ্ন।
এক যাত্রী বলেন, “বাড়ি ফেরার আর ইচ্ছা নেই, বাসে মরে গেলেই ভাল হত।” ওই মহিলা যাত্রী লক্ষাধিক টাকার শাড়ি নিয়ে আসছিলেন কলকাতায়। তিনি জানিয়েছেন, ২-৪ মাস যাতে চলে যায় তার জন্য টাকা ধার করেই এসেছিলেন। আর এক ব্যবসায়ীও জানান, ঋণের টাকায় পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে যাচ্ছিলেন তিনি। সব হারিয়ে চোখের জল বাধ মানছে না তাঁরও।
প্রশাসনিক তৎপরতায় রাতেই সব যাত্রীকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় খড়গ্পুর লোকাল থানায়। পরবর্তী সময়ে যদিও একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান কোনও শিশুর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। শনিবার ফরেনসিক টিম যাবে খড়্গপুরে।
অভিশপ্ত ওই বাসের যাত্রীদের সঙ্গে দেখা করতে রাতেই খড়্গপুর লোকাল থানায় হাজির হন রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা। ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সুপারও। মানস ভুঁইয়া জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।