প্রত্যেকদিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার চালাচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়ার প্রচারে উপস্থিত হয়েছেন তিনি।
নিয়োগ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “আমাদের ১০ লক্ষ চাকরি রেডি আছে। সরকারের বিভিন্ন দফতরে। বলে দেওয়া হচ্ছে, কেউ যেন চাকরি না পায়। চাকরি পেলে বিজেপি উঠে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিচারপতিদের অসম্মান করি না। গণতন্ত্র আজ কাঁদছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। স্কুল চলবে কী করে। আসলে চাইছে এরা যেন ভোটে কাজ করতে না পারে, কেন্দ্রীয় এজেন্সির লোক কাজ করবে।”
শুভেন্দুর নাম না করে মমতা বলেন, “টাকা রক্ষা করতে হবে, নাহলে ইডি সিবিআই ধরবে, তাই তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যেতে হল। তার নাম মুখ বলতে আমার লজ্জা লাগে। গদ্দার, বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, তিনি কারও কাছে কিছু নেননি? বলতে পারবেন, কত জন তাঁর হাত দিয়ে পেয়েছে? পুরুলিয়ার লোকেরা রাস্তায় কেন বসেছিল? তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ। এই নির্বাচনে এবার বুঝে নেব।”
নিয়োগ বাতিলের রায় প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “টিচারদের চাকরি খেয়ে নিল, যেন মগের মুলুক। আমি আইনটা একটু-আধটু জানি। আমি নিজেও একজন আইনজীবী। প্রশাসনের আধিকারিকরাও সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে, ছাত্রছাত্রীরাও গিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমি বলেছি, কাজ করতে গিয়ে যদি কোনও ভুল হয়, সংশোধন করে দেব। সময় দাওয়া, কোনও অসুবিধা নেই। সবাই সব কাজ সঠিকভাবে সমানভাবে করতে পারে না।”
নেতাজির কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, “নেতাজি তাঁর বইতে লিখেছিলেন, রাইট টু মেক ব্লান্ডার। মানুষের অধিকার আছে ভুল করার। ভুল করলে সংশোধন করে দাও। কিন্তু কখনও তোমরা বলতে পার না যে বোমা ফাটাব।”
‘২৬০০০ ছেলেমেয়ের চাকরি চলে গেল, তাদের পরিবার না খেতে পেয়ে মারা যাবে। বলছে, ১২ সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে হবে। এত বড় সাহস!’ আদালতের রায় প্রসঙ্গে বলেন মমতা।
মমতা বলেন, “এখন বিজেপি মিছিলে গেলেই অনেক টাকা দিচ্ছে, শুনেছি আমি। কদিন দেবে? লোক জোগাড় করতে পারছ না বলে টাকা দিয়ে কিনছে। মিথ্যাবাদীদের ভোট দেবেন কেন?”
শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে আক্রমণ শানিয়ে মমতা বলেন, “আমরা চাকরি দিচ্ছে। ওরা চাকরি কাটছে। মেদিনীপুরের এক গদ্দার আছে। গদ্দাররা মিথ্যা কথা বলছে। বলছে বোমা ফাটাবে। ছেলেমেয়েদের চাকরি খেয়ে নিল।”
বিজেপিকে ভোট দেবেন না। এ কথা বলে মমতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনবার দেখা করলাম। অফিসারদের মধ্যে মিটিংও হল। কিচ্ছু হল না। বিজেপি নেতারা বলে দিচ্ছে, বাংলায় রাস্তার টাকা দেবে না, আবাস যোজনার টাকা দেবে না। ওরা ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করেছে। দেঙ্গে… দেঙ্গে বলতে বলতে ভোট পার হয়ে গেল।”
‘প্রার্থী বদলালে… কাকের বাসায় কোকিল ডিম পাড়ে, বড় হলে চলে যায়। আপনারা কেন আগের প্রার্থীকে না দিয়ে অন্য একজনকে নিয়ে এলেন? তাঁর গুণগান আমি করতে চাই না, কারণ আমি ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে চাই না। নাহলে প্রশ্ন তুলতে পারতাম।’ এই বলে বিজেপির বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানালেন মমতা।
‘আগেরবার সিট টা হেরেছিলাম। এবার সিট টা দেবেন তো?’ মেদিনীপুর কেন্দ্রে গিয়ে বললেন মমতা। বিনা পয়সায় রেশন দেওয়া সহ একাধিক প্রতিশ্রুতি যে পূরণ করা হয়েছে, এ কথাও মঞ্চে দাঁড়িয়ে উল্লেখ করেন মমতা।
মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে দিলীপ ঘোষকে সরানো হল কেন? প্রশ্ন তুললেন মমতা। তিনি বলেন, “সাংসদকে সরালেন কেন। দেখতে পারতেন তো মানুষ আবার তাঁকে গ্রহণ করছে কি না। তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া বিধায়ক হিসেবে অনেক কাজ করেছেন, সে কথাও উল্লেখ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো।” তাঁর দাবি, কেশিয়ারিতে আরএসএস-এর একটি স্কুল আছে।
সভার শুরুতেই সবাইকে গরমে সুস্থ থাকার পরামর্শ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাথা ঢেকে রাখা, লেবু জল খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। মমতা জানান, গত ৩১ মার্চ থেকে প্রচার শুরু করেছেন তিনি। সম্প্রতি তাঁর হেলিকপ্টারও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি জীবনে দেখিনি, তিন মাস ধরে ভোট। অনেক জায়গায় প্রথম দফায় ভোট হয়ে গিয়েছে। বিহারে আর গুজরাটে বাকি রেখেছে দেখানোর জন্য। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলব কোন কোন রাজ্যে কত কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হয়েছে।”