ডেবরা : যুগ বদলাচ্ছে। আধুনিক হচ্ছে। চারিদিকে কুসংস্কার বিরোধী প্রচার অভিযানও চলছে। কিন্তু এর মধ্যেও ফের মধ্যযুগীয় বর্বরতা। এবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায়। ‘ডাইন’ অপবাদে এক বৃদ্ধকে ঘরছাড়া করার নিদান দিল গ্রামের মাতব্বররা। এলাকা না ছাড়লে প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার পর পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ডেবরা ৩ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা বছর ৬৭-র ওই বৃদ্ধ। পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে ওই বৃদ্ধকে বাড়িতে ফিরিয়েও আনা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও ফের বৃদ্ধের বাড়িতে চড়াও হয় গ্রামবাসীরা। আবারও তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে গত কুড়ি – বাইশ দিন ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরাচ্ছেন তিনি। কখনও রাত কাটাচ্ছেন ডেবরা বাজার এলাকায় আবার কখনও উড়ালপুলের নীচে। এমনই অসহায় অবস্থায় রাত কাটছে তাঁর।
ওই বৃদ্ধ জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে বৃদ্ধের এক ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। চিকিৎসাও করানো হয়েছিল। কিন্তু তারপরও আশানুরূপ কোনও উন্নতি হয়নি শরীরের। রোগে ভুগতে ভুগতেই মৃত্যু হয় বৃদ্ধের ওই ছেলের। এরপরই গ্রামবাসীদের সন্দেহের দৃষ্টি যায় ছেলে-হারা শোকস্তব্ধ ওই বৃদ্ধের দিকে। কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে ওই বৃদ্ধকে ‘ডাইন’ অপবাদ দেয় গ্রামবাসীরা। বলা হয়, বৃদ্ধের জন্যই তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছে। বৃদ্ধের কারণে গ্রামের আরও অনেকের শারীরিক অবস্থার অবনতি বা প্রাণহানির আশঙ্কা করছিলেন গ্রামবাসীরা। আর এরপরই অবিলম্বে ওই বৃদ্ধকে গ্রাম ছাড়ার নিদান দেয় মাতব্বররা। শুরু হয় বৃদ্ধের উপর অকথ্য অত্যাচার। বৃদ্ধকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, গ্রাম না ছাড়লে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।
এমন শাসানি পেয়ে অসহায় বৃদ্ধ ডেবরা থানার পুলিশের দ্বারস্থ হন। বৃদ্ধের অভিযোগ পেয়ে ব্যবস্থা নেয় পুলিশ প্রশাসনও। দুইজন সিভিক ভলান্টিয়ার গিয়ে বৃদ্ধকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে আসেন। গ্রামবাসীদেরও ওই কুসংস্কার থেকে মুক্ত করে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু সিভিক ভলান্টিয়াররা গ্রাম থেকে চলে যেতেই ফের সেই একই ঘটনা। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ফের বৃদ্ধের বাড়িতে চড়াও হয় গ্রামবাসীদের একাংশ। ফের বৃদ্ধকে মারধর ও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। আবারও তাঁকে গ্রামছাড়া হতে বাধ্য করা হয়। সেই থেকে প্রায় সপ্তাহ তিনেক হয়ে গেল, অসহায় বৃদ্ধ ঘুরে ঘুরে বেরোচ্ছেন রাস্তায়।