দাসপুর ও চন্দ্রকোণায়: চারটে দেওয়াল, মাথার ওপর ছাদ নেই। কোনওরকমে ত্রিপল টাঙিয়েই খোলা জায়গায় চলে রান্না। যথেচ্ছ উড়ে এসে পড়ে ধুলোবালি। নিরুপায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা। ওই ভাবেই চলছে শিশুদের জন্য রান্না। রাজ্যে মিড ডে মিলের (Mid Day Meal) গুণগত মান খতিয়ে দেখতে যখন জেলায় জেলায় পরিদর্শন করছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল, ঠিক সেই সময় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের রান্নার ক্ষেত্রে চরম অব্যবস্থার ছবি ধরা পড়ল দাসপুরে (Daspur) ও চন্দ্রকোণায় (Chandrakona)। দাসপুর এক নম্বর ব্লকের বাসুদেবপুর এলাকায় রয়েছে নির্ভয়পুর বড়শিমুলিয়া সেনাপতি পাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে পড়াশোনা করে আশপাশের গ্রামের অন্তত ৫০ জন শিশু। শিশুদের বসার জন্য রয়েছে পাকা বাড়ি। তবে নেই রান্নাঘর। ফলে রাস্তার ধারে ত্রিপল খাটিয়েই চলছে কেন্দ্রের রান্না। গিয়ে দেখা গেল, সেই ত্রিপলও ফেটে গিয়েছে চারিদিক থেকে। রান্নার মধ্যে উড়ে এসে পড়ছে ধুলোবালি। চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না হলেও নিরুপায় কেন্দ্রের কর্মীরা।
কেন্দ্রের কর্মীর দাবি, রান্না ঘরের জন্য বারবার প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েও মেলেনি সাড়া। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের এমন বেহাল দশা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। শিশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্য যখন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে পুষ্টিকর খাওয়ার দেওয়ার কথা সেখানে কীভাবে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না করা হচ্ছে! তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। দাসপুর পঞ্চায়েত সদস্য মৌমিতা রায় বলেন, “সমস্যাটা রয়েছে। বিডিওকে জানাব। একটি ভবন হলে আমরা খুবই উপকৃত হব।”
অপর দিকে জায়গার অভাব, নিজস্ব ভবন নেই, যাযাবরের মতো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঠাঁই নিয়ে চলে চন্দ্রকোণার নয়াগঞ্জ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। তেমনই একটি আশ্রমের ভাঙাচোরা বাড়িতে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় লন্ঠনের আলোয় চলছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী থেকে অভিভাবকরা। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ওই কেন্দ্রে পাঠাতে আতঙ্কে উঠে অভিভাবকরা। সাধারণ মানুষ চাইছেন, এই অঙ্গনওয়াড়িতেও ঘুরে দেখে যাক কেন্দ্রীয় টিম।
এমনই বেহাল ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় প্রায় ১০ বছর ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় লন্ঠনের আলোয় চলছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডে নয়াগঞ্জ ১৭৪ নং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা রুমা সাহা জানান,অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটিতে বর্তমানে প্রসূতি, ছাত্রছাত্রী মিলে মোট ৮০ জনের মিড ডে মিলের রান্না হয়, ৮০ জনের মধ্যে ৩০ জন খুদে পড়ুয়া রয়েছে। আগে এই কেন্দ্রটি ওয়ার্ডের নয়াগঞ্জ দেশ কমিটির একটি শিবমন্দিরের জায়গায় চলত। সেখান থেকে সরে যেতে বলায় প্রায় ১০ বছর হল ওই ওয়ার্ডেরই একটি আশ্রমের এক চিলতে ভগ্নপ্রায় রুমে আশ্রয় নিয়ে চলছে নয়াগঞ্জ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি। যেখানে নেই কোনও বিদ্যুৎ সংযোগ, রুমের ভিতরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ছাদ ভেঙে ঝুলছে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ওই একই কক্ষে থাকে মিড ডে মিলের যাবতীয় সামগ্রী আর তারই একপাশে মাদুর পেতে কখনও মোমবাতি তো আবার কখনও বিলুপ্ত প্রায় লন্ঠনের আলোয় চলে ক্ষুদে পড়ুয়াদের পঠনপাঠন।
কেন্দ্রের সহায়িকা জানান,এভাবে ছোটছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই ভাঙাচোরা অন্ধকার কক্ষে পঠনপাঠন করাতে রীতিমতো ঝুঁকির। এছাড়াও ওই ভবনের দুয়ারে ত্রিপল টাঙিয়ে মিড ডে মিলের রান্না করতে হয় রাঁধুনিকে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা রুমা সাহা বলেন, প্রশাসনের তরফে ভবন তৈরি করে দেওয়ার কথা বলা হলেও স্থানীয় স্তরে জায়গার অভাব আর জায়গা না মেলায় এমন পরিস্থিতির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলছে নয়াগঞ্জ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি। চন্দ্রকোণার চেয়ারম্যান প্রতিমা পাত্র বলেন, “আমরা দ্রুত জায়গার ব্যবস্থা করছি। খুব শীঘ্রই আশাকরি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”