চন্দ্রকোনা: ডাইনি অপবাদ দিয়ে বৃদ্ধ দম্পতিকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছিল ক’দিন আগে। প্রতিবেশীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে তারপর সপরিবারে বাড়ি ছেড়েছিলেন ওই দম্পতি। নিরাপদে ঘরে ফিরতে ঘুরছিলেন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে। শনিবার বিকালে প্রশাসনের আধিকারিকরা পৌঁছালেন সেই গ্রামে। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর (Paschim Medinipur) জেলার চন্দ্রকোনা এক নম্বর ব্লকের লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জগন্নাথপুর গ্রামের। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে গ্রামে বাস দিনু ভাদুলীর।
সূত্রের খবর, রীতি মেনে প্রতি বছরের মতো এই গ্রামে আয়োজন করা হয়েছিল শালিক পুজোর। সবই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু, আচমকা গ্রামের মাতব্বরা বলেন, দিনু ভাদুলির উপর রয়েছে অপদেবতার ছায়া। কেউ কেউ ডাইনি অপবাদও দিতে শুরু করে তাঁর স্ত্রীকে। মারধর শুরু হয় দিনু ও তাঁর স্ত্রীকে। লাঠি-বাঁশ দিয়ে চলে ব্যাপক মারধর। ওই ঘটনার পর কোনওমতে গ্রাম থেকে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন তাঁরা। তারপর থেকে রোজই ঘুরছেন আত্মীয়দের দরজায় দরজায়। কোথাও মিলছিল ঠাঁই। কোথাও মিলছিল না।
ঘরে ফিরতে দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রশাসনের। অবশেষে শনিবার বিকালে ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস ও চন্দ্রকোনা এক ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী-সহ বেশ কয়েকজন প্রশাসনিক আধিকারিক। কথা বলেন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাঁদের মনের মধ্যে থাকা কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করারও চেষ্টা করেন। ডাইনি বিদ্যা, ডাইনি অপবাদ, সবই আসলে মনের মধ্যে থাকা কুসংস্কারেরই অংশ। তাও বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এলাকাবাসীকে নিয়ে আলোচনার পর দিনু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঘটনায় প্রসঙ্গে চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, “এখনও এলাকার মানুষের মধ্যে কুসংস্কার বড় ছাপ রয়েছে। আমরা এলাকায় গিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ছাড়াদের ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” এ দিকে এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই চন্দ্রকোনা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে খবর। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।