পশ্চিম মেদিনীপুর: ১৬ বছরের পাত্রীকেই পছন্দ ৫৫ বছরের পাত্র।নাবালিকার বাবাকে কাজ দেওয়ার সুবাদে পরিচয়। তারপর বাড়িতে যাতায়াত, পছন্দ। সটান বিয়ের প্রস্তাব। কিন্তু বাবার থেকেও বড় বয়সী লোককে বিয়ে করতে নারাজ ছিল নাবালিকা। আর তারই ফল ভোগ করতে হল তাকে। গলায় পড়ল ধারালো অস্ত্রের কোপ। ধারালো অস্ত্র এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায় তার গলা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নাবালিকা। শিউরে ওঠার মতো ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরে পিংলার বলিশ্বরপুরে।
নাবালিকার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ষোলো বছরের ওই নাবালিকা পিংলা গার্লস স্কুলের ছাত্রী। সম্প্রতি তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন ৫৫ বছরের এক ব্যক্তি। নাবালিকা ও তার পরিবার সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। এরপর নানাভাবে চাপ বাড়তে থাকে। কিন্তু মাথানত করে না নাবালিকা।
বুধবার সন্ধ্যায় বাড়ির অদূরেই বলিশ্বরপুর এলাকায় ম্যাজিক শো দেখতে গিয়েছিল নাবালিকা। অভিযোগ, ফেরার সময়ে বেশ কয়েকজন যুবক তার পথ আটকায়। তাদের মধ্যে একজন ছিল এলাকার যুবক মুস্তাফা খান। নাবালিকা তাকে চিনতেও পারে। অভিযোগ, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মারে তারা। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নাবালিকা। স্থানীয়রা তার আর্তনাদ শুনতে পেয়ে ছুটে আসেন।
রক্তাক্ত অবস্থায় নাবালিকাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নাবালিকা। এদিকে ঘটনাকে ঘিরে গ্রামে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই গ্রামে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বাসিন্দারা। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পিংলা থানার পুলিশ। পরিস্থিতি তাতে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বেশ কিছুক্ষণ পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। এলাকাবাসীদের বক্তব্য, যতক্ষণ না পর্যন্ত ওই যুবক সহ বাকিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, ততক্ষণ এই বিক্ষোভ চলবে। রাজ্য সড়ক আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন গ্রামবাসীদের একাংশ। পুলিশ কথা বলে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করছে।
মেয়ের মা বলেন, “আমার মেয়ের বয়স ১৪-১৫ বছর। ও ম্যাজিক খেলা দেখতে গিয়েছিল। সেখান থেকেই ওকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। আসানি মুস্তাফা, ফিরায়ে বারি-সহ তিন চার জন ছিল। আমরা ওর ফাঁসি চাই।” এক গ্রামবাসী বলেন, “গ্রামে এসব বরদাস্ত করা যায় না। আজকে অন্যের মেয়ের সঙ্গে এমনটা ঘটেছে, কাল আমার বাড়ির মেয়ের সঙ্গেও ঘটতে হবে। পুলিশকে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতেই হবে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কড়া শাস্তি দিতে হবে। যাতে কেই এই কাজ করতে না পারে।”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই নাবালিকার পিসি বলেন, “ঘটনাটা অনেক দিন ধরেই চলছে। আমার দাদার লকডাউনে কাজ ছিল না। তখন ওই লোকটার সঙ্গে পরিচয়। ওই লোকটা আমার দাদাকে কাজ দিয়েছিল। তখন থেকেই আমার ভাইঝির ওপর নজর। বাড়িতে আসত, শুধু আমার ভাইঝিকে ডাকত। আমার ভাইঝি বলেছিল, বাবা কাজ ছেড়ে দেও, লোকটা ভালো না। আমার দাদা কাজটা ছেড়েও দেয়। তারপরই বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমরা জানিয়ে দিই সেটা সম্ভব নয়। তারপরই এই হামলা। আমরা কাল ম্যাজিক দেখতে গিয়েছিলাম। অন্ধকারের মধ্যে বাইক নিয়ে ক’জন চলে আসে। আমি আমার বাচ্চাটাকে সামলাচ্ছিলাম। তখন ওকে ঠেলে ফেলে গলা কেটে দেয়। হাত ও পায়েও কোপ দেয়। ”