ঘাটাল: সারা বছর এখন আর রেডিয়োর সেই চাহিদা নেই। হাতে গোনা কয়েকটা বাড়িতে রেডিয়োর উপস্থিতি চোখে পড়ে। কখনও সখনও বাসে উঠলে কিংবা গাড়িতে, কানে আসে এফএমএমের শব্দ। তবে সারা বছর চাহিদা থাক বা না থাক, মহালয়ার ভোরে কিন্তু আকাশবাণীতে মহিষাসুরমর্দিনী না শুনলে সিংহভাগ বাঙালির দুর্গাপুজোই আসে না। মহালয়া আসতেই তাই বোবা মুখে বুলি ফোটাতে চরম ব্যস্ত ঘাটালের সঞ্জয়, বুদ্ধদেবরা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে অনেক কিছুই। টেলিভিশনের পর্দা হোক কিংবা রেডিয়ো, স্বাদ বদলেছে দর্শক, শ্রোতাদের। তবে কিছু কিছু জিনিস আছে যা কোনওদিনই বদলায় না। বাঙালির আবেগ অনুভূতির সঙ্গে চিরন্তন যোগ তার। মহালয়ার ভোর যেন সেই চিরন্তনী। আর শিউলি ফোঁটা মহালয়ার ভোরে আকাশবাণীতে মহিষাসুরমর্দিনী না শুনলে পুজো আর এল কোথায়?
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটালের বুদ্ধদেব পাল ও চন্দ্রকোণার সঞ্জয় হাউসি। সারা বছর হাতে তেমন কাজের চাপ না থাকলেও এই সময়টা দম ফেলার ফুরসত নেই। গুরু দায়িত্ব পড়ে তাঁদের কাঁধে। বাড়িতে পড়ে থাকা মরচে পড়া যন্ত্রগুলোয় বুলি ফোটাতে হবে যে! এই বেতার ধরেই তো বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে ওঠে আলোকমঞ্জির। আর এই উচ্চারণেই ধ্বনিত হয় আগমনীর আগমনবার্তা। তাই বছরে অন্তত এইদিনটার জন্য হলেও বাড়ির কোণে পড়ে থাকা রেডিয়োকে ঝেড়ে মুছে পৌঁছে দেওয়া হয় সঞ্জয়, বুদ্ধদেবের মতো অনেকেরই কাছে।
বুদ্ধদেব পাল বলেন, “আগের মতো ভিড় নেই এখন আর রেডিয়োর দোকানে। মহালয়ার জন্য সারাতে আসছেন কয়েকজন। ওই অবধিই।” অন্যদিকে সঞ্জয় হাউসির কথায়, “প্রতি বছরই এই দিনটার জন্য মানুষ রেডিয়ো কিনতে বা সারাই করতে আসেন। অনেকেই আসছেন রেডিয়ো নিয়ে। বয়স্ক লোকজনই আসছেন বেশি। রেডিয়ো ঠিকঠাক করে দিতে বলেন। আসলে রেডিয়ো সারানোর সমস্যাও আছে। অনেক যন্ত্রাংশই এখন আর পাই না।”