খড়গপুর: চিকিৎসার পর চিকিৎসাতেও সাড়া দেয়নি তাঁর শরীর। জন্ম থেকে চলছে এক কঠিন লড়াই। হাত-পা কোনওটাই সক্রিয় নয়। চলাফেরা তো দূরের কথা, হাত ধরে বসিয়ে না দিলে, বসতেও পারেন না তুহিন দে। কিন্তু তাতে কী! সে তো স্টিফেন হকিংও অনেক কিছু পারতেন না। তার জন্য কি আর কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণা আটকে থেকেছে! সেরকমই অসাধ্য সাধনের পথে এগোচ্ছেন খড়গপুরের তুহিন দে।
হাত-পা সক্রিয় না হলেও বুদ্ধিমত্তায় অনেককে ছাপিয়ে যেতে পারেন অনায়াসে। তাই তো ৫০ লাখের প্যাকেজ (মাসে প্রায় ৪ লক্ষের বেশি) হেলায় ফিরিয়েছেন তিনি। আমেরিকার ব্যাঙ্ক থেকে চাকরির অফার আসা সত্ত্বেও গ্রহণ করেননি তিনি। তুহিনের কাছে লাখ টাকার চাকরিও তুচ্ছ। তাঁর লক্ষ্য আকাশছোঁয়ার।
খড়গপুর আইআইটি ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন তুহিন। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন রাজস্থানের কোটা থেকে। তারপরই শিবপুর থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে বি টেক করেন তুহিন। হাতে লিখতে না পারলেও তুহিন কিন্তু পরীক্ষার সময় লেখক হিসেবে কোনও দিন কাউকে নেননি। নিজেই মুখে পেন বা পেন্সিল নিয়ে অনায়াসে লিখে ফেলেন সব। শুধু পাতা ওল্টাতে সাহায্য করেন শিক্ষকরাই।
শুধু পেন-পেন্সিল নয়, কম্পিউটার বা ল্যাপটপে টাইপও করতে পারেন ওই মুখ দিয়েই। আর তুহিনের কাছে সবই ‘নর্মাল’। কোনও কিছুকেই অসুবিধা বলে মনে করেন না তিনি। তুহিনের স্পষ্ট বক্তব্য, “আমি মুখ দিয়েই সাধারণ পেন বা পেন্সিল দিয়ে লিখি। সমস্যা হয় না। পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত সময়ও নিই না। মুখ দিয়ে ছবি আঁকতে বা কম্পিউটার চালাতেও অসুবিধে হয় না।”
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে এম টেক-এর প্রবেশিকা পরীক্ষা রয়েছে তুহিনের। তার প্রস্তুতি চলছে। চাকরি নয়, আরও আরও বেশি জ্ঞান অর্জন করাই লক্ষ্য তুহিনের। স্পেসশিপ নিয়ে রিসার্চ করার ইচ্ছা রয়েছেন বলে জানান তিনি। তাই কলেজের ক্যাম্পাসিং-এ ৫০ লক্ষ প্যাকেজের চাকরি মিললেও, তা গ্রহণ করেননি তুহিন। মা সুজাতা জানান, ছেলেকে নিত্য কাজ করে দিতে হয়। খাবারও মুখে তুলে দিতে হয়। তবে লেখাপড়ায় ছেলে সাবলম্বী। শুধু খাতা বা বইয়ের পাতা উল্টে দিলেই লিখতে পারেন তুহিন।
পড়াশোনা ও কাজের জন্য ইতিমধ্যেই পুরস্কারও পেয়েছেন একাধিক। রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপালের হাত থেকেও পুরস্কার নিয়েছেন তুহিন।