আলিপুরদুয়ার: করোনা আবহে পেটে খিদে। মুখে হাসি নেই। দরজায় কড়া নাড়ে না ‘কাস্টমার’। ভয় সংক্রমণের। উপরি পাওনা লকডাউন। পেশায় ভাটা যৌনকর্মীদের (Prostitute)। সরকারি নির্দেশে যখন ১৮ থেকে ৪৪ বছরের নির্বাচিত ‘প্রথম সারির যোদ্ধারা’ টিকা পাচ্ছেন, তখনও ব্রাত্যই ছিলেন যৌনকর্মীরা। লকডাউনে, বিভিন্ন সময়ে তাঁদের পাশে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (NGO) ছিল পরিযায়ী পাখির মতো। এই পরিস্থিতিতে, আলিপুরদুয়ারে সমাজনগরে শনিবার ৯২ জন যৌনকর্মীকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু করে জেলা প্রশাসন। এদিন, উপস্থিত ছিলেন আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বোস, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ গিরিশ চন্দ্র বেরা,আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক প্রিয়দর্শিনী ভট্টাচার্য।
শনিবার টিকা নিয়ে রীতিমতো খুশি যৌনকর্মীরা। টিকাপ্রাপ্ত এক যৌনকর্মীর কথায়, “আমরা টিকা পেয়ে খুশি। এই পরিস্থিতিতে যেভাবে কাজ করতে হয়, তাতে এই টিকাকরণ (COVID Vaccination) খুবই জরুরি ছিল। আমাদের অনেক উপকার হল।” মহকুমা শাসক প্রিয়দর্শিনী ভট্টাচার্য বলেন, “ইটস আ মোমেন্ট অব এমপাওয়ারমেন্ট। যৌনকর্মীরা যেভাবে কাজ করেন তাতে তাঁদের জীবনের ঝুঁকি অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে তাঁদের এই টিকাকরণ জরুরি ছিল।” জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশ চন্দ্র বেরা বলেন, “যৌনকর্মীদের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ববিধির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পূর্ণ অলীক একটি ধারাণা। ফলে, ‘সম্মুখ যোদ্ধা’ হিসেবে তাঁদের টিকাকরণ জরুরি। লকডাউনে হয়তো ওঁদের পেশায় কিছুটা টান পড়েছে, কিন্তু, পুরো বন্ধ হয়ে যায়নি। তাছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন ‘সম্মুখ যোদ্ধা’ হিসেবে যৌনকর্মীদেরও টিকা দেওয়া হবে। আমরা সেই কথা চিন্তা করেই সরকারের কাছে আবেদন করি। প্রশাসনের তরফে তাই অন্য সম্মুখ যোদ্ধাদের সঙ্গে ওঁদেরকেও টিকা দেওয়া হল।”
উল্লেখ্য, তৃতীয়বার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরেই করোনা মোকাবিলাতেই প্রাথমিক নজর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। রাজ্য়ে উত্তরোত্তর করোনা সংক্রমণ রুখতে ‘কার্যত লকডাউন’ ঘোষণা থেকে শুরু টিকাকরণে জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, বঙ্গে আরও টিকা ও কোভিড শয্য়া চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠিও লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে ইতিমধ্যেই ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়স্কদের ক্ষেত্রে পেশার ভিত্তিতে টিকাদান শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, ‘কার্যত লকডাউনের’ জেরে রাজ্যে কমেছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। শনিবার স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত শেষ বুলেটিন অনুযায়ী, বাংলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৫১৪ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৪৮ জনের। রাজ্যে সুস্থতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় একানব্বই শতাংশ।