কাটোয়া : অভাবের সংসার। বাবা কৃষক। কিন্তু, দারিদ্রতা তাঁর স্বপ্নে দাঁড়ি ফেলতে পারেনি। সেই স্বপ্নের উড়ানে চড়েই এখন মানুষকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন কাটোয়ার শেখ রিয়াজউদ্দিন। বাইক, গাড়ি, ট্রাকে তেলের খরচ বাঁচাতে গবেষণা করে চলেছেন। পেট্রোল, ডিজেলের বদলে জল দিয়ে এইসব যানবাহন (water fuelled car) চালানো যাবে কীভাবে, সেই গবেষণা করছেন। তরুণ এই গবেষক বেস্ট থিসিস অ্যাওয়ার্ড জিতে পেয়েছেন সোনার মেডেল। তাঁর নাম উঠেছে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি ন্যানো জার্নালে। গবেষণার জন্য ডাক পেয়েছেন আমেরিকা, সৌদি আরব থেকে।
কাটোয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম বাঁধমুরা। এখানেই বাড়ি বছর তিরিশের শেখ রিয়াজউদ্দিনের। তাঁর বাবা শেখ বাগবুল ইসলাম পেশায় কৃষক। মায়ের নাম আমিনা বিবি। রিয়াজউদ্দিনরা এক ভাই, এক বোন। ছোট থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী। গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনার পর কাটোয়া পঞ্চাননতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০০৮ সালে পাশ করে মাধ্যমিক। পান ৮২ শতাংশ নম্বর। এরপরই বর্ধমান আল আমিন মিশন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ভর্তি হন আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেন। সর্বভারতীয় নেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পিএইচডি করেছেন পঞ্জাবের মোহালি ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে। এখন সেখানেই তিনি গবেষণারত। ন্যানো সায়েন্সের উপর সাড়ে পাঁচ বছর ধরে তিনি গবেষণা করছেন।
রিয়াজউদ্দিন এখন রয়েছেন পাঞ্জাবে। ফোনে তিনি বলেন, “আমরা সবাই জানি জলকে ভাঙলে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন উৎপাদন হয়। এই হাইড্রোজেনকে কাজে লাগিয়ে ‘হাইড্রোজেন ফুয়েল কার’ এখন বিদেশে পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। কিন্তু জলকে ভাঙার কাজে যে ধরনের অনুঘটক ব্যবহার করতে হয় তা অত্যন্ত দামি মৌল। তাই ওই ধরনের দামি মৌল ব্যবহার করলে আখেরে লাভ কিছু নেই। কিন্তু টিন, নিকেল, কপার ইত্যাদির মতো সহজলভ্য ধাতু অনুঘটক হিসাবে ব্যবহার করেও জলকে ভেঙে হাইড্রোজেন ব্যবহার সম্ভব। জল থেকে উৎপাদিত ওই হাইড্রোজেন দিয়েই হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল অনায়াসে তৈরি করা যায়। আর তার খরচ অত্যন্ত কম। কম খরচে জল থেকে হাইড্রোজেন তৈরি করে তার ব্যবহারের পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলেছেন রিয়াজউদ্দিন। আর তাঁর সেই গবেষণার জন্যই তাঁকে এনে দিয়েছে বেস্ট থিসিস আ্যওয়ার্ড। এমনকি এই হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল কারে যে ব্যাটারি থাকবে তার চার্জ হবে সৌরশক্তির মাধ্যমে। তাই বিদ্যুৎ শক্তির খরচও তাতে সাশ্রয় হবে বলে দাবি গবেষকের। রিয়াজউদ্দিন আরও বলেন, এই ধরনের গবেষণার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল হাইড্রোজেন মিশন এর ঘোষণা করেছেন। আগামী দিনে হাইড্রোজেন শক্তির উপরই চাকা ঘুরবে।
তাঁর এই গবেষণায় আগামী দিনে নতুন করে ঘুরবে অগ্রগতির চাকা। ছেলের এই সাফল্যে খুশি তাঁর পরিবার। শেখ বাগবুল ইসলাম বলেন, “ছেলে ছোট থেকেই কিছু করার স্বপ্ন দেখত। আজ তার স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে দেখে আমরা আনন্দিত।” রিয়াজউদ্দিনের সাফল্যে গর্বিত গ্রামবাসীরা।
কাটোয়া পঞ্চাননতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন , “ছোট থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিল রিয়াজউদ্দিন। তাকে কোনওদিন স্কুল কামাই বা স্কুলের পড়াশোনায় ফাঁকি দিতে দেখা যায়নি।” আজ তাঁর সাফল্যে খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।