বর্ধমান: বিজেপিকে সরিয়ে কর্নাটকের তখত কার্যত নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। জয় নিশ্চিত হওয়ার পর সাংবাদিক বৈঠকে বসে বেশ চনমনে রাহুল গান্ধীও (Rahul Gandhi)। রাহুলের কথায়, কর্নাটকে কংগ্রেসের এই জয় ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালবাসার জয়। এদিকে কর্নাটকে কংগ্রেসের জয়ের পর উচ্ছ্বসিত বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। তাঁর দাবি, বিজেপিকে রুখতে গেলে কংগ্রেসই একমাত্র বিকল্প। সেই সঙ্গে আরও সুর চড়িয়ে প্রদেশ সভাপতি বলেছেন, ‘আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল বাষ্পীভূত হয়ে যাবে।’ আর অধীরবাবুর এই মন্তব্য মোটেই ভালভাবে দেখছেন না তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক শুরু থেকেই বেশ অম্ল-মধুর। জাতীয় রাজনীতিতে সোনিয়াদের সঙ্গে বেশ ভাল সম্পর্ক মমতাদের। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার উদ্যোগ বার বার দেখা গিয়েছে। সেখানে যেমন কংগ্রেসের ভূমিকা রয়েছে, তেমনই ভূমিকা রয়েছে তৃণমূলেরও। কিন্তু দিল্লির রাজনীতি থেকে বাংলার রাজনীতির দিকে মুখ ঘোরালেই প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক মোটেই খুব একটা ভাল নয়। অধীর চৌধুরীর এদিনের মন্তব্যের পর অভিষেক বলেছেন, ‘নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে যদি কেউ মানুষের কথা না বলেন, তাহলে তাঁর রাজনীতিতে থাকা উচিত নয়। অধীর চৌধুরী যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন, তাহলে অধীর চৌধুরী বিজেপির হাতই শক্তিশালী করছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএম জোট করে কার হাত শক্তিশালী করেছে? কার সুবিধা হয়েছে?’
একইসঙ্গে অভিষেকের বক্তব্য, ‘যদি তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে সমর্থন করতে আরও পাঁচ-দশটা আসন হলেও বাড়ত। লোকসান তো আখেড়ে বিজেপির হত। কিন্তু যদি কেউ তৃণমূলকে আক্রমণ করে বিজেপির লাভ করে দিতে চান, তাহলে ধরে নিতে হবে তিনি বিজেপির হাত শক্তিশালী করছেন।’
যদিও কর্নাটকে কংগ্রেসের হাতে বিজেপি পর্যুদস্ত হওয়ায় খুশি অভিষেক। পূর্ব বর্ধমান জেলায় জনসংযোগ যাত্রা থেকে অভিষেকের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অতীতে বলেছিলেন যে কোনও দলকে ভোট দিন, কিন্তু বিজেপিকে হারান। বললেন, ‘বাংলা যে নো ভোট টু বিজেপি প্রচার কর্মসূচি চলেছে, কর্নাটকেও তাই হয়েছে।’ তাঁর আরও বক্তব্য, ধর্মের সুড়সুড়ি, বিচ্ছিন্নতাবাদের রাজনীতি, মানুষকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার প্রচার কোনওদিন রাজনৈতিক ইস্যু হতে পারে না। রাস্তা-ঘাট, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা পরিষেবা, কর্মসংস্থান… এসব নিয়ে বিজেপি কোনওদিন বলে না।’
বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে বাংলাই পথ দেখিয়েছিল, সেই কথাও এদিন আরও একবার বুঝিয়ে দিতে চাইলেন অভিষেক। তৃণমূল সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের কথায়, ‘ধর্মের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করা শুরু হয়েছিল বাংলার মাটি থেকে। ২০২১ সালে এদের অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একা হাতে আটকে দিয়েছিলেন। যারা বলেছিল ‘আবকি বার দু’শো পার’, তারা মানুষের পালস বুঝছে না।’ পদ্ম শিবিরকে একহাত নিয়ে অভিষেক বলেন, ‘মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করা শুরু করে দিয়েছে। আমরা অত্যন্ত খুশি এবং বঙ্গবাসী হিসেবে অত্যন্ত গর্বিত যে, ২০২১ সালে বাংলা যে পথ দেখিয়েছিল, কর্নাটকের প্রত্যেকটি মানুষ তা অনুসরণ করেছে। গোখলে বলেছিলেন, হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে, ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুমরো। বাংলার মানুষ যা ২০২১ সালে করেছিলেন, কর্নাটকের মানুষ তা ২০২৩ সালে করলেন, ভারতের মানুষ তা ২০২৪ সালে করবে। এদের পতন শুরু হয়ে গিয়েছে, এদের ক্ষমতা থেকে যাওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।’
ডবল ইঞ্জিন সরকার নিয়েও বিজেপিকে একহাত নিলেন অভিষেক। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার, কর্নাটকেও এতদিন বিজেপির সরকার ছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে অভিষেকের প্রশ্ন, ‘কর্নাটকের মানুষ প্রত্যাখ্যান করল কেন? ওটা ডবল ইঞ্জিন নয়, ট্রাবল ইঞ্জিন। প্রধানমন্ত্রীর একটা কথাওর বাস্তবায়ন হয়নি।’ অভিষেকের বক্তব্য, ‘কর্নাটকের মানুষ বিজেপিকে শুধু হারায়নি, বাংলার মতো কর্নাটকেও ল্যাবেগোবরে করে দিয়েছে।’ বিজেপি বিরোধী ভোট যেন কোনওভাবেই ভাগাভাগি না হয়ে যায়, সেই বার্তাও অভিষেক দিলেন। বললেন, ‘আমরা চাই সবাই সর্বশক্তি প্রয়োগ করে একসঙ্গে লড়ুক। অ্যান্টি বিজেপি ভোট যেন ভাগ না হয়। যার যেখানে শক্তি, সেই দল সেখানে লড়ুক।’