কদমগাছে বেঁধে বুকের উপর তোলা হয় সাইকেল, জলটুকু দেওয়া হয়নি, নৃশংস এই খুনের ঘটনায় দোষীদের ভয়ঙ্কর শাস্তি দিল কোর্ট

Manatosh Podder | Edited By: অবন্তিকা প্রামাণিক

Dec 23, 2024 | 10:00 PM

Burdwan: সোমবার বর্ধমানের পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক দেবশ্রী হালদার এই রায় ঘোষণা করেছেন। সাজাপ্রাপ্তদের নাম মোহন পণ্ডিত ওরফে দুর্লভ, অজয় পণ্ডিত ওরফে দুর্লভ, রাজু পণ্ডিত ওরফে দুর্লভ, মিলন বাগ, কবিতা পণ্ডিত ওরফে দুর্লভ, ছবি বাগ, শান্তি ঘোড়ুই, অলকা বাগ ও লক্ষ্মী বাগ।

কদমগাছে বেঁধে বুকের উপর তোলা হয় সাইকেল, জলটুকু দেওয়া হয়নি, নৃশংস এই খুনের ঘটনায় দোষীদের ভয়ঙ্কর শাস্তি দিল কোর্ট
কারাদণ্ড দিল আদালত
Image Credit source: Tv9 Bangla

Follow Us

বর্ধমান: সালিশিতে না যাওয়ায় এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মারার ঘটনায় ন’জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল বর্ধমান আদালত। এছাড়াও সাজা প্রাপ্তদেরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছ’মাস সশ্রম কারাবাস করতে হবে সাজা প্রাপ্তদের। চার্জশিটে ২৬ জনের নাম ছিল। তাদের সকলের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। তার মধ্যে দু’জন বিচার চলাকালীন মারা যান। তাদের নাম মামলা থেকে খারিজ হয়ে যায়। অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন পরবর্তীকালে নাবালক বলে জানা যায়। বর্ধমান জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে তাদের বিচার চলছে। উপযুক্ত প্রমাণের তেরো জনকে খালাস ঘোষণা করেছেন বিচারক। সোমবার বর্ধমানের পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক দেবশ্রী হালদার এই রায় ঘোষণা করেছেন। সাজাপ্রাপ্তদের নাম মোহন পণ্ডিত ওরফে দুর্লভ, অজয় পণ্ডিত ওরফে দুর্লভ, রাজু পণ্ডিত ওরফে দুর্লভ, মিলন বাগ, কবিতা পণ্ডিত ওরফে দুর্লভ, ছবি বাগ, শান্তি ঘোড়ুই, অলকা বাগ ও লক্ষ্মী বাগ।

সাজাপ্রাপ্তদের বাড়ি মেমারি থানার করন্দা গ্রামে। কেসের সরকারি আইনজীবী অজয় দে বলেন, “এই মামলায় এগারো জন সাক্ষ্য দেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ভিত্তিতে ন’জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। তাদের যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এছাড়াও ১০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। বাকিদের বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছেন বিচারক।”

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর খুনের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ করন্দা গ্রামের ভূতনাথ মালিক ওরফে ভনা (৩৬) মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তার কিছুদিন আগে নবান্ন উৎসবের দিন ভূতনাথের সঙ্গে স্থানীয়দের গণ্ডগোল হয়। ঘটনার দিন তাঁকে স্থানীয় একটি ক্লাবে সালিশিতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় এলাকার মাতব্বররা। কিন্তু, ভূতনাথ সালিশিতে হাজির হননি। অভিযোগ, রাস্তায় দেখতে পেয়ে অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন তাঁকে মারতে মারতে ক্লাবের কাছে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে বেধড়ক পেটানো হয়। পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়দের কয়েকজন তাঁকে বাঁচাতে গেলে তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে কেউ ভূতনাথকে বাঁচাতে যাননি। পরিস্থিতি এতটাই আতঙ্কের ছিল যে, পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে পুলিশ না পৌঁছনো পর্যন্ত সেখানে যেতে পারেননি। ক্লাবের কাছে একটি কদমগাছের নীচে নিয়ে গিয়ে তাঁকে বেধড়ক পেটানো হয়। তাঁর বুকে সাইকেল চাপিয়ে দেওয়া হয়। জলের জন্য কাতর আর্তি জানান ভূতনাথ। তাও তাঁকে দেওয়া হয়নি। মারধরে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ভূতনাথের।

খবর পেয়ে বেশ কিছুক্ষণ পর পুলিশ সেখানে পৌঁছে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। ঘটনার বিষয়ে মৃতের আত্মীয় গণেশ মালিক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির খুন, প্রমাণ লোপাটের ধারায় মামলা রুজু করে থানা। অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন গ্রেফতার হয়। কয়েকজন আদালতে আত্মসমর্পণ করে। পরে অভিযুক্তরা জামিনে ছাড়া পায়। তদন্ত সম্পূর্ণ করে ২০১২ সালের ১৯ মার্চ সাব ইন্সপেক্টর মহম্মদ সফিউদ্দিন ২৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেন। চার্জশিটে একজনকে পলাতক দেখানো হয়। ২০১৪ সালের ২২ মে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়।

Next Article