Katwa Awas Yojona: খড়ের চালে অজস্র ফুঁটো, ছেদ নেই সততায়! আরও বড় গরিব যেন পায় ছাদ, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কুঁড়ে ঘরের মালকিন গ্রামের উপপ্রধান

TV9 Bangla Digital | Edited By: শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী

Jan 09, 2023 | 4:45 PM

Katwa Awas Yojona: "আমি আবাসের ঘর পেতে কোনও আবেদন জানাইনি। আমার থেকেও অনেক গরিব মানুষ রয়েছে, তাঁদের ঘরটাই আগে হোক।"

Katwa Awas Yojona: খড়ের চালে অজস্র ফুঁটো, ছেদ নেই সততায়! আরও বড় গরিব যেন পায় ছাদ, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কুঁড়ে ঘরের মালকিন গ্রামের উপপ্রধান
নিজের ঘরের সামনে উপপ্রধান

Follow Us

কৌশিক দত্ত: আবাস নিয়ে যখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি, যখন দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ হচ্ছেন শাসক-বিরোধী দলের নেতৃত্ব, তখন শিরোনামে উঠে আসার মতো একটি খবর। এক চিলতে ঘর, খড়ের চাল, বর্ষায় চালের নীচে জল আটকাতে প্লাস্টিক টাঙাতে হয়। সেই ঘরেই বাস গ্রামেরই এক জনপ্রতিনিধির। তিনি গ্রামের পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। কার্যত আবাসের তালিকায় তিনিও যোগ্য। কিন্তু আবাস যোজনায় যোগ্য গ্রামবাসীদের পাকা ঘরের ব্যবস্থা করে দিলেও মাটির কুঁড়ে ঘরে দিন কাটছে উপ প্রধানের। শীত,গ্রীষ্ম, বর্ষা এক চিলতে মাটির ছিটা বেড়ার খড়ের ছাউনির ঘরে স্বামী সন্তানদের নিয়ে বাস করছেন উপপ্রধান।পঞ্চায়েতের উপ প্রধানের পদে বসে সুযোগ না নিয়েই তাঁর থেকে গরিব মানুষজনদের আবাস যোজনার ঘর ও পঞ্চায়েতের বিভিন্ন পরিষেবা পাইয়ে দিতে মরিয়া কাটোয়ার সিঙ্গি পঞ্চায়েতের উপ প্রধান রাখি ধারা। যেখানে শাসক দলের বিরুদ্ধে আবাস যোজনার ঘর নিয়ে অভিযোগের বন্যা বইছে, সেখানে এই উপপ্রধানের মানবিকরূপ এক অনন্য নজির।

কাটোয়ার সিঙ্গি পঞ্চায়েতের মালঞ্চ গ্রামে মাটি, ছিটে বেড়া ও খড়ের ছাউনির ঘর উপ প্রধানের। স্বামী মিলন ধারা দিন মজুর। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে অভাবের সংসার।অনায়াসেই উপপ্রধান রাখি ধারা আবাস যোজনায় পাকা ঘর পেতে পারতেন। কিন্তু উপপ্রধানের পদে থেকে কোন সুযোগ নিতে চাননি। বরং তাঁর থেকে যাঁরা অসহায় তাঁরাই আবাস যোজনায় যাতে পাকা ঘর পান, সেই চেষ্টায় লেগে রয়েছেন তিনি। কুঁড়ে ঘরে থেকে সংসারের কাজ সেরে প্রতিদিন নিয়ম করে গ্রাম ঘুরে দুঃস্থ অসহায় গ্রামবাসীদের আবাস যোজনার তালিকায় নাম তোলা ও পঞ্চায়েতের বিভিন্ন পরিষেবার বার্তা ও অবগত করতে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যান।

গ্রামবাসীদের অভাব অভিযোগ সমস্যা নিজের অভাব উপেক্ষা করেই হাসিমুখে শোনেন। উপ প্রধানের স্বামীর পৈতৃক বাড়ি। বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি থাকেন এক কামরার মাটির ঘরে। দেওর টিনের চালার ঘরে বাস করেন। শ্বশুরের মৃত্যুর পর স্বামীর ভাগে মাটির জীর্ণ কুঁড়ে ঘরের অংশে বসবাস উপ প্রধানের।

স্ত্রী উপ প্রধানের দ্বায়িত্বে থেকে পাকা ঘর নিলে গ্রামের অনেকেই নানান কথা বলবেন।তাই কুঁড়ে ঘরে বাস করেও সুযোগ নিয়ে পাকা ঘরের আবেদন করেননি, জানিয়েছেন রাখি ধারার স্বামী মিলন। অভাব ও কুঁড়ে ঘরে বাস করে কোনওদিন নিজের কথা না ভেবে গ্রামবাসীদের ভালোর জন্য চিন্তা করেন, এমন উপ প্রধান পেয়ে খুশি গ্রামবাসীরাও। দলীয় বুথ সভাপতি-সহ তৃনমূল দলের নেতা কর্মীরা উপ প্রধানের অভাবের কথা সকলেই জানেন। পূর্ব বর্ধমান তৃনমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, দল থেকে এই রকম মানুষকেই যোগ্য পদে বসানো হয়েছে। দল তাঁকে সঠিক দ্বায়িত্ব দিয়েছে। সিঙ্গি গ্রামের প্রধান দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আসলে তো ওঁরই ঘর পাওয়ার কথা। কিন্তু ওঁ চাইছেন ওঁর থেকে গরিব মানুষরা ঘর পান, তাই আবেদনও করেননি। ওঁর এই সিদ্ধান্তে আমরা অভীভূত।”

হাসি মুখে রাখি বললেন, “আমি আবাসের ঘর পেতে কোনও আবেদন জানাইনি। আমার থেকেও অনেক গরিব মানুষ রয়েছে, তাঁদের ঘরটাই আগে হোক।”

Next Article