পূর্ব বর্ধমান: চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে ভুরি ভুরি বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে রাজ্যে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে ভুয়ো প্যানেল তৈরি করে অযোগ্য প্রার্থীকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে যখন শাসক দলকে কোণঠাসা করার অস্ত্রে শান দিয়েছে বিরোধীরা, তখন মামলাকারীদের দিকেই দায় ঠেললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি মামলার জন্যই আটকে আছে চাকরি, নাহলে চাকরি দেওয়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাজ্য। এই প্রসঙ্গে সরাসরি বর্ষীয়ান বাম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি।
মঙ্গলবার পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা। সভায় উপস্থিত ছিলেন সস্ত্রীক শত্রুঘ্ন সিনহাও। মঞ্চে মমতা যখন পুরোদমে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছেন, তখন আচমকা এক মহিলা প্ল্যাকার্ড তুলে দাঁড়িয়ে পড়েন। সেখানে লেখা, ‘চাকরি চাই।’ আর সেই দৃশ্য দেখে ক্ষুব্ধ হন মমতা। এ সব যে আসলে বিজেপির রাজনীতি, সেটা বারবার উল্লেখ করেন তিনি। বিজেপি-সিপিএমকে দুষতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই মহিলা উঠে দাঁড়ানোর পরই মমতা বলে ওঠেন, ‘এটা কোর্টে আছে, কোর্টে যান।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন সিপিএম ও বিজেপির রোজকার নাটক হয়েছে, আমার সভায় এসে এ সব করা।’
এ দিন মমতা সাফ বার্তা দেন, ১৭ হাজার চাকরি প্রস্তুত আছে তাঁর কাছে। আদালত সবকিছু দেখছে বলেই সেই চাকরি দিতে পারছে না রাজ্য সরকার। মামলাকারীদের সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারাই তো কেস করেছেন। কোর্ট বলেছে চাকরি থেকে ছাঁটাই করে দিতে, আমাকে তো কোর্টের কথা মানতেই হবে। কোর্ট বলেছে, এখন সব বন্ধ। আমি তো সেটা মানব। আমার হাতে আর কিছু নেই।’ তিনি এ দিন আবার হিসেব দিয়ে জানান, ১৭ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ করবে সরকার। আরও ৫০০০ বঞ্চিতদের জন্যও চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এতটি প্যানেলের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
যেহেতু এসএসসি সংক্রান্ত মামলা লড়ছেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাই তাঁর নাম করে এ দিন মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, ‘আপনাদের সিপিএমের আইনজীবীদের বলুন। বিকাশ বাবুদের গিয়ে বলুন। আপনার তো টাকার অভাব নেই। আপনি কেস করে ছেলেমেয়েদের চাকরি বন্ধ করে দিলেন। আপনি যেমন চাকরি বন্ধ করেছেন, আপনিই আবার চাকরি চালু করবেন। এটা আপনাকে করতেই হবে।’
মমতার যুক্তি, যদি আদালতে মামলা চলে, তাহলে পরীক্ষা হবে কী করে! পাশাপাশি ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা উল্লেখ করেন, ত্রিপুরায় ১০ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছিল। বিজেপি বলেছিল ফিরিয়ে দেবে, কিন্তু বিজেপি ফেরায়নি।
মমতার এই আক্রমণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি মামলা করিনি। আমি মামলাকারীদের পক্ষে সওয়াল করেছি। সওয়াল করাটাই আমাদের কাজ। মামলা করার জন্য দুর্নীতি সামনে এসেছে। সাহস থাকলে মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করুন।’
‘দিদি কিছু বলতে চাই’, সোমবারের বর্ধমানের সভায় এই বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন টেটের চাকরি প্রার্থী। সেই মুহূর্তে পুলিশ এসে তাঁদের সরিয়ে দেয়। তবে সভাস্থল ছাড়েননি তাঁরা। সভা শেষে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ডেকে পাঠান তাঁদের। মঞ্চের নীচে ‘রেস্ট রুমে’ তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।