Purbosthali: ফোড়া পেকে সারা শরীরে দগদগে ঘা, গ্রামের অধিকাংশ মানুষের শরীরে বাসা বেঁধেছে ‘জল-আতঙ্ক’

Purbosthali: গ্রামেরই এক বাসিন্দা বলেন, "এই গোটা গ্রামটাই আর্সেনিক প্রবণ। খাওয়ার জল মোটেই পাওয়া যায় না। যা টাইম কলে জল দেয়, তাতে এক দু'বালতি ভরে। কিন্তু একটা গোটা পরিবারের ৫-৬ জন সদস্য কীভাবে দু'বালতি জলে সারাদিন চালাবে।"

Purbosthali: ফোড়া পেকে সারা শরীরে দগদগে ঘা, গ্রামের অধিকাংশ মানুষের শরীরে বাসা বেঁধেছে জল-আতঙ্ক
আর্সেনিক আক্রান্ত গ্রামের এক বাসিন্দাImage Credit source: TV9 Bangla

| Edited By: শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী

Dec 01, 2023 | 2:32 PM

বর্ধমান: কারোর হাতের চামড়ায় দগদগে ঘা, কারও পিঠে, কারও আবার সারা শরীরে। চামড়া উঠে গিয়েছে, খসখসে, গা ঘিনঘিনে শরীর। গোটা গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার শরীরে এখন বাসা বেঁধেছে চর্মরোগ। আর্সেনিক প্রবণ একটা গ্রাম। সেখানে জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। সরকারি পাম্প বসানো হয়েছে। কিন্তু সেখানে জল পড়ে না। ফলে ভরসা একমাত্র কেনা জল। গ্রামের অধিকাংশ মানুষই চাষবাস করে দিন কাটান। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারে জল কিনে খাওয়াটাই যে মস্ত বিলাসিতা! অভাবী পরিবারের সদস্যরা এখন কয়েক কিলোমিটার পথ উজিয়ে পাশের গ্রাম থেকে বালতি, গামলা করে জল এনে খেতে হচ্ছে। পূর্বস্থলীয় দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের আর্সেনিক প্রবণ মাদ্রা গ্রামে এই ছবি ধরা পড়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত ও PHE দফতর থেকে প্রত্যেক বাড়িতে পরিশ্রুত আর্সেনিক মুক্ত জলের ট্যাপ কল বসানো হয়েছিল। সালটা ২০০৩ সালে। অভিযোগ, ৫ বছর ধরে সেই ট্যাপ কলে জলই পড়ে না। প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, সবটা জানানোর পরেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

গ্রামেরই এক বাসিন্দা বলেন, “এই গোটা গ্রামটাই আর্সেনিক প্রবণ। খাওয়ার জল মোটেই পাওয়া যায় না। যা টাইম কলে জল দেয়, তাতে এক দু’বালতি ভরে। কিন্তু একটা গোটা পরিবারের ৫-৬ জন সদস্য কীভাবে দু’বালতি জলে সারাদিন চালাবে।”

আরেক মহিলা গ্রামবাসী বলেন, “আয়ের তো বেশিরভাগ চলে যাচ্ছে জলেই। জল কিনে খাই। ভয় যদি এই জল খেয়ে নিলে আমাদের শরীরেও আর্সেনিক হয়।” মাটির ঘরে বসে আরেক মহিলা বলেন, “রান্নার জলটা পাশের গ্রাম থেকে নিয়ে আসি। আর খাওয়ার জল কিনে খাই। ”

এ প্রসঙ্গে, গ্রামের উপপ্রধান সবিতা ঘোষ বলেন, “আমরা গ্রামবাসীদের বাড়ি বাড়ি আর্সেনিক মুক্ত জল দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করছি, আর্সেনিকমুক্ত জল দিতে। আসলে গ্রামে পাইপলাইনে পয়েন্ট বেশি হয়ে গিয়েছে। তাই জলের গতি কমে যাচ্ছে।”

মাদ্রা গ্রামে একই পরিবারের ৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে। ওই পরিবারের এক সদস্য এখনও আর্সেনিক আক্রান্ত। আর্সেনিক আক্রান্ত সেই বাসিন্দা আনন্দ রায় বলেন, “সরকারি কোনও পরিষেবা নেই। আমার কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না। টিউবওয়েলের জল খেয়েই হয়েছিল। প্রথমে চুলকানি হয়, তারপরই সারা গায়ে গুটি বেরিয়ে যায়। বাড়ির পাঁচ বোনই আর্সেনিকে মারা গিয়েছে।” ওই ব্যক্তির স্ত্রী বলেন, “আগে টাইম কলে জল আসত। কিন্তু গত ৪-৫ বছরে আর পড়ে না। আমরা মাটি খুঁড়ে গর্ত করে পাইপ বসিয়ে জল তুলে খাই। জল কিনে খাওয়ার ক্ষমতা নেই।”

এ প্রসঙ্গে আর্সেনিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেবাশিস নাগ বলেন, “প্রথমে হাতে-পায়ে-গায়ে ফুটো ফুটো কালো ছোপ হয়। সেগুলো পরে পেঁকে যেত, ঘা হত। আর্সেনিকের জন্যই হয়। এরপর এটা শেষ পর্যন্ত ক্যান্সারও হয়ে যায়।”