দুর্গাপুর ও বর্ধমান : মুখে আলতো হাসি। যন্ত্রণা ভোলার চেষ্টা। আটদিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরলেন রেণু খাতুন। যত দ্রুত সম্ভব চাকরিতে যোগ দিতে তিনি উন্মুখ হয়ে রয়েছেন। আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানালেন। দুর্গাপুরের হাসপাতাল থেকে এসে উঠেছেন বর্ধমানে দিদির বাড়িতে।
৪ জুন। অভিযোগ, স্ত্রীকে চাকরি করতে দেবে না বলে রেণুর স্বামী শের মহম্মদ তাঁর ডান হাতের কব্জি কেটে নিয়েছিল। সেই রাতেই কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল ও বর্ধমান ঘুরে ৫ জুন সকালে দুর্গাপুরের এই হাসপাতালে রেণুকে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা।
এই হাসপাতালে আনতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ায় রেণুর কাটা হাত আর জোড়া লাগানো সম্ভব হয়নি চিকিৎসকদের পক্ষে। তবে দৃঢ় মানসিকতার রেণু প্রথম দিন থেকেই চিকিৎসায় সহযোগিতা করেন। কিছুদিন আগে সরকারি চাকরিতে নার্স হিসাবে প্যানেলভুক্ত হন। তবে সেই খুশি তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার জন্য ডান হাতের কব্জি থেকে কেটে দেয় তাঁরই স্বামী ।
এরপর শুরু হয় নতুন লড়াই। হাসপাতালের বেডে শুয়েই বাম হাতে লেখা অনুশীলন শুরু করে দেন রেণু খাতুন। সংবাদ মাধ্যমে এই খবর প্রচারিত হওয়ার পরে রাজ্য সরকারও নড়েচড়ে বসে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন রেণুর পাশে থাকবে সরকার। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তৈরি করে সরকারি খরচে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা হয় রেণুর। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রেণুর কৃত্রিম হাতের ব্যবস্থা ও সরকারি চাকরি দেবে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই রেণুর হাতে সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন পূর্ব বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক।
আটদিন দুর্গাপুরের এই হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে সোমবার বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুর মালিরবাগান এলাকায় দিদির বাড়িতে এসে উঠলেন রেণু। তিনি জানান, চিকিৎসার সুবিধার্থে দিদির বাড়িতে এসে উঠেছেন।
তিন মাস পর তাঁর কৃত্রিম হাত লাগানো হবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কিন্তু, দ্রুত চাকরিতে যোগ দিতে চান রেণু। যত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন, তত তাড়াতাড়ি চাকরিতে যোগ দিতে চান। এদিকে, তাঁর হাত যারা কেটেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানালেন। শের মহম্মদের সঙ্গে আর সংসার করবেন কি না, জানতে চাইলে রেণু স্পষ্ট জানান, এখনও কিছু ভাবেননি তিনি। একইসঙ্গে জানালেন, তাঁর মতো যাঁরা নির্যাতিতা, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চান।