পূর্ব বর্ধমান: দামোদর নদী থেকে অবৈধ বালি (Sand) উত্তোলন রুখতে কঠোর প্রশাসন। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে জেলা ভূমি সংস্কার দফতরের উদ্যোগে বর্ধমানের ইদিলপুর ঘাটে চলে পুলিশি অভিযান। রাতভোর অবৈধ বালি তোলার কাজে যুক্ত প্রায় ২৫ টি নৌকো ইতিমধ্যেই আটক করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে একাধিক বালি বোঝাই ট্র্যাক্টরও।
এদিন, ব্লক রেকর্ড অফিসার নির্মলচন্দ্র ঘোষ বলেন, “বর্ষার কারণে ১৫ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত নদী থেকে বালি (Sand) উত্তোলন বন্ধ থাকে। কিন্তু, তারপরেও নিয়ম ভেঙে বালি তোলা হচ্ছে এই অভিযোগ পেয়েই আমরা তদন্তে নামি। বর্ষায় নদী থেকে বালি তুললে নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সরকারের রয়েলটি নষ্ট হয়। বালি তোলার কাজে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যতদিন বালি তোলার নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে ততদিন পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।” প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশের অনুমান, অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও পাচারের নেপথ্যে কোনও বিশেষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রভাব থাকতে পারে। সম্প্রতি, মঙ্গলকোটে তৃণমূল নেতা অসীম দাসের খুনের নেপথ্য়ে এই বালিপাচার চক্রকেই দায়ী করেছিলেন তদন্তকারীরা। তবে কে বা কারা এই চক্রের পেছনে রয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
তবে দামোদর নদী থেকে অবৈধ বালি (Sand) উত্তোলন কোনও নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এই অবৈধ বালি উত্তোলন করা হয়েছে। এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানিয়েছেন, নদীতীরে ১০০ মিটার দূরে দূরে বালি তোলায় বরাবরই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বহু জায়গাতেই ১০০ মিটারের মধ্যে বালি তোলা হচ্ছে। অনেক জায়গায় আবার জলপ্রবাহ রুখে নদীর মাঝবরাবর বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। ফলে পাড় ঘেঁষে জলস্রোত বইতে থাকায় ভূমিক্ষয় ঘটছে। দামোদরের বাঁধও দুর্বল হয়ে পড়ছে অনেক জায়গায়।
কিছুদিন আগেই নিম্নচাপের জেরে বানভাসি অবস্থা হয়েছিল দামোদরের নিম্ন উপত্যকায়। ঘটনায় মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ম্যান মেড’ বন্যার অভিযোগ তুললেও ডিভিসির তরফে জানানো হয়েছিল, নদীপার থেকে বালির পর বালি তুলে নেওয়ায় নাব্যতা তলানিতে এসে ঠেকেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইদিলপুর যে তার ব্যতিক্রম নয় তাও জানিয়েছেন জেলাশাসক। তাঁর দাবি, ১৯৭৭ সালে ওই এলাকার বাঁধ ভেঙে বর্ধমান শহর প্রায় জলের তলায় চলে গিয়েছিল। এরপরে প্রশাসন থেকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। তবুও নানা ভাবে নদী বাঁধকে বালি উত্তোলনের স্বার্থে দুর্বল করে চলেছে বালি মাফিয়ারা।
বস্তুত, বালি মাফিয়া রুখতে কড়া পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার। নতুন স্যান্ড মাইনিং পলিসির কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মমতা জানান, বালি খনন নিয়ে অনেক অভিযোগ সামনে আসছে। তাই ‘স্যান্ড মাইনিং পলিসি ২০২১ আনা হয়েছে। স্থানীয় মাফিয়ারা বালি, কয়লা, পাথর পাচার করে বলে অনেক জায়গায় অভিযোগ উঠেছে। আবার কাউকে খননের দায়িত্ব দিলে তিনি চারগুণ বেশি খনন করে নেন। ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। এতদিন কেবল জেলাশাসকের হাতেই খননের দায়িত্ব থাকত। সেই দায়িত্ব এ বার মাইনিং কমিটির হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্য়মন্ত্রী। প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে কোনও রকমের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না বলেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা। অভিযোগ এলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে সরকার। এমনকী, অনলাইনেও অভিযোগ করা যেতে পারে। সেই অভিযোগ সরকারের তরফ থেকে তদন্ত করে দেখা হবে। আরও পড়ুন: ‘দিদির উপর ভরসা করলে তালিবানের গুলি খেতে হবে তাই…’, ‘বিকল্প’-সন্ধানী দিলীপ