পূর্ব বর্ধমান: ফের শিরোনামে খাগড়াগড়। এবার ‘সৌজন্যে’ জাল নোট তৈরির কারখানা। বৃহস্পতিবার খাগড়াগড়ে জাল নোট তৈরির কারখানার খোঁজ মেলে বলে অভিযোগ। পুলিশ হানা দিয়ে প্রচুর জাল নোট, নকল নোট ছাপানোর মেশিন-সহ অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করে। এই ঘটনায় বর্ধমান থানার পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতারও করেছে। খাগড়াগড় পূর্ব মাঠপাড়ায় এই ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। ধৃতদের নাম দীপঙ্কর চক্রবর্তী, গোপাল সিং ও বিপুল সরকার। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমজন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা। বাকি দু’জনের বাড়ি বর্ধমান শহরে। বেশ কিছুদিন ধরে পুলিশের কাছে খবর ছিল, খাগড়াগড় ও সংলগ্ন বেশ কয়েকটি এলাকায় জাল নোটের কারবার চলছে। বর্ধমান থানার পুলিশ সমস্ত তথ্য প্রমাণ সংগ্রহে গোপন অভিযান শুরু করে। এরপরই তাদের কাছে মাঠপাড়ার একটি বাড়ির খবর আসে। অভিযোগ পায়, ওই বাড়িতে জাল নোটের কারবার চলে।
এরপরই বৃহস্পতিবার বিকেলে আচমকা সেখানে হানা দেয় বর্ধমান পুলিশের একটি দল। হাতেনাতে তিনজনকে ধরে। পুলিশসুপার কামনাশিস সেন জানান, ধৃতদের কাছ থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। সঙ্গে নোট তৈরির ছাপ ও পাউডার-সহ আরও কিছু জিনিস। শুক্রবারই তিনজনকে আদালতে তোলা হবে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে এই চক্রের শিকড় কত দূর ছড়িয়েছে তা জানার চেষ্টা করবে পুলিশ। কে বা কারা এই কাজে যুক্ত, কতদিন ধরে এই ব্যবসা চলছে, এই নকল টাকার ব্যবসার আড়ালে অন্য কোনও ব্যবসা চলছে কি না সবদিকই পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের স্ক্যানারে।
পূর্ব মাঠপাড়ায় সিরাজুল ইসলামের বাড়ি। স্থানীয়রা জানান, মাস চার পাঁচ আগে গোপাল সিং নামে এক ব্যক্তি তাঁর পরিবার নিয়ে এই বাড়িতে ঘর ভাড়া নেন। তাঁর স্ত্রী, শাশুড়ি রয়েছেন। অসুস্থ শাশুড়িকে দেখাশোনার জন্য রয়েছেন এক পরিচারিকা। ওই পরিচারিকা জানান, গোপাল সিং নিজেকে মানবাধিকার কর্মী বলে পরিচয় দিতেন। খাগড়াগড় কাণ্ডের পর এই ঘটনা ফের চিন্তায় ফেলেছে এলাকার লোকজনকে। কোন বিপদের পিছু নিয়ে কী হাজির হয়, সেটাই ভাবাচ্ছে তাদের। অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি করেছেন তাঁরা।
গোপাল সিংয়ের বাড়ির পরিচারিকা বলেন, “কাকা আর একটা লোক এল প্রথমে। দু’জনই ঘরে ঢুকে পড়ল। আমি তখন কাপড় ধুচ্ছিলাম। এরপর আরও কয়েকজন এল। আমি তখন ছাদে কাপড় শুকোতে দিতে গিয়েছিলাম। নামার পর আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আমি কে? বলল কোনও ভয় নেই। পুলিশ এসেছিল। দু’টো ব্যাগ নিয়ে গেছে। সঙ্গে গোপাল সিংকেও ধরে নিয়ে গিয়েছে।”
শেখ আজাদ নামে এলাকার এক বাসিন্দা জানান, “এই বাড়িটায় দু’জন অসুস্থ মহিলা আছেন। তাঁরা বিকেলে হাঁটতেন। এরা কে, কী করে কিছুই জানি না। চার, পাঁচ মাস হল এখানে আছে। একটা বাচ্চা মেয়ে কাজ করে। সে এদিক ওদিক যায়। কোনওদিন কিছু সন্দেহও হয়নি। তবে এলাকার কারও সঙ্গে মিশত না এরা।”