পূর্ব বর্ধমান: মা, বাবার কাছে মোবাইল ফোনের আবদার করেছিল ছেলে। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। অত টাকা কোথায় যে মুখ থেকে বের করলেই হাতের কাছে জিনিস এনে দেবেন। বাবার সে অসহায়তার কথা বুঝতে পারেনি কিশোর-মন। অভিমানে নিজেকে শেষ করে দেয় ১৬ বছর বয়সী বিকি বাগদী। ১০-১২ দিন আগে বিষ খেয়েছিল। সোমবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। বিকির বাড়ি মঙ্গলকোটের উনিয়া গ্রামে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকি স্থানীয় গণপুর হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ত। বন্ধুদের সকলের হাতে ফোন দেখে তারও ইচ্ছা হয়েছিল একটা মোবাইল ফোন কেনার। বাবাকে বলে সে। এদিকে তাদের বাড়ির কাজ চলছিল। তাই বাবা জানান, কিছুদিন অপেক্ষা করতে। কিন্তু সেই অপেক্ষা করতে পারেনি বিকি। বাড়িতেই বিষ খেয়ে নেয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় প্রথমে তাকে গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর সপ্তাহখানেক হাসপাতালে লড়াই চলে। সোমবার রাতে থামে জীবনযুদ্ধ।
বিকির বাবা বিশ্বনাথ বাগদী বলেন, “আমি একটা মিস্ত্রির কাজ করি। ছেলেটা ফোন চেয়েছিল। আমি আবার সরকার থেকে একটা ঘর করব বলে কিছু টাকা রাখছিলাম। আমি বলেছিলাম, দু’দিন অপেক্ষা কর। ঘরটা তুলে নিই, তারপর কিনে দেব। ছেলে শুনল না। বিষ খেল। সপ্তাহখানেক আগে বিষ খায়। প্রথমে গুসকরা। সেখান থেকে বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে আসি। সোমবার রাত ১টার সময় মারা যায়। ওর মা বারবার বুঝিয়েছিল, বাবার হাতে একটু পয়সা হোক ফোন কিনে দেবে। শুনল না।” বিশ্বনাথের কথায়, গরীব বাবাকে এভাবে শাস্তি দিল ছেলেটা? চোখে জল চিকচিক করছে সন্তানহারা পিতার। অন্যদিকে নিহতের এক দাদা জয়ন্ত বাগদীর কথায়, “ও বাড়িতে বলেছিল একটা ফোনের দরকার, কিনে দিতে। বাবা তো দিন আনে দিন খায়। কোথায় এত টাকা পাবে? বুঝল না। মোবাইলটা না দেওয়ায় রাগ অভিমানে এটা করল।”